মঙ্গলবার, ৭ মার্চ, ২০২৩

ভারতের স্বীকৃতি না পাওয়া একজন গুপ্তচর

 ভারতের
একজন গুপ্তচর



যে কোন দেশের গুপ্তচরেরা সেই দেশের অগোচরে থেকে
যায়। তারা যে দেশের জন্য কি বলিদান দেয় তা সবার অগোচরে থেকে যায়। এমনকি অনেক সময়
মৃত্যুর পরও অনেক দেশ স্বীকার-ই করতে চায় না যে
, সে
ছিল ঐ দেশের গুপ্তচর।



ভারতেরও এমনই এক মহান গুপ্তচরের কথা জানবো।
যিনি অন্য আর এক ভারতীয় গুপ্তচরের নির্বুদ্ধিতার কারণে ধরা পড়ে গিয়েছিলেন সেই
ভারতের চিরশত্রু পাকিস্তানে। ফলে অকথ্য অত্যাচারের মধ্য দিয়ে কেটেছিল তাঁর বাকি
জীবনটা সেই পাকিস্তানের জেলে। অবশ্য তাঁর মৃত্যুর পর ভারত সরকার তাঁকে কোন যোগ্য
সম্মান দেয়নি। হ্যাঁ
, এখানে
বলা হচ্ছে ভারতীয় গুপ্তচর রবীন্দ্র কৌশিকের কথা।



রাজস্থানের শ্রী গঙ্গানগরে রবীন্দ্রর জন্ম
১৯৫২-র ১১ এপ্রিল। এই শহর থেকেই তিনি স্নাতক হন। লখনউয়ে জাতীয় স্তরের নাটক
প্রতিযোগিতায় অভিনয় করেছিলেন তিনি। সেখানেই তাঁকে চোখে পড়ে ভারতীয় গোয়েন্দা
সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং বা
-এর আধিকারিকদের। জানা যায়, রবীন্দ্রকে প্রস্তাব দেওয়া হয়
পাকিস্তানে গিয়ে
-এর গুপ্তচর হয়ে কাজ করার। এর পর দুবছর ধরে দিল্লিতে কঠোর অনুশীলন পর্ব চলে তাঁর।
উর্দুর পাশাপাশি রবীন্দ্রকে শেখানো হয় ইসলামিক সংস্কৃতির খুঁটিনাটি।
রাজস্থান-পঞ্জাব সীমান্ত শহর গঙ্গানগরের ছেলে হওয়ায় এমনিতেই তিনি পঞ্জাবিতে চোস্ত
ছিলেন। তাঁকে এমন ভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়
, যাতে
পাকিস্তানের জনজীবনে মিশে যেতে পারেন সহজে। ১৯৭৫ সালে ২৩ বছরের তরুণ রবীন্দ্র
দুবাই
, আবুধাবি
হয়ে পৌঁছন পাকিস্তানে।। তাঁর নতুন পরিচয় হয় নবি আহমেদ শাকির। নষ্ট করে ফেলা হয়
তাঁর ভারতীয় পরিচয়ের যাবতীয় নথি।



পরবর্তীতে রবীন্দ্র ওরফে আহমেদ করাচি
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি সম্পূর্ণ করেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে নিযুক্ত হন
কমিশনড অফিসার হিসেবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি মেজর পদে উন্নীত হয়েছিলেন।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এক দরজির মেয়ে আমানতকে বিয়ে করেছিলেন রবীন্দ্র। তাঁদের একটি
সন্তানও হয়েছিল। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ
, ১৯৭৯
থেকে ১৯৮৩ অবধি রবীন্দ্র কৌশিক বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভারতে পাঠিয়েছিলেন। তাঁর
পাঠানো তথ্য দেশের প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বলা হয়
, ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক
থেকে তাঁর নাম দেওয়া হয়েছিল
ব্ল্যাক
টাইগার

এটাই ছিল তাঁর সাঙ্কেতিক নাম।



আশির দশকের গোড়ায় ইনায়ৎ মসিহা নামে আর এক
গুপ্তচরকে পাঠিয়েছিল
। পরিকল্পনা ছিল, তিনি রবীন্দ্রর সঙ্গে যোগাযোগ
করে তাঁকে কাজে সাহায্য করবেন। কিন্তু অভিযোগ
, ইনায়তের
নির্বুদ্ধিতার কারণে সব গোপনীয়তা নষ্ট হয়ে যায়। প্রথমে পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের
কাছে ধরা পড়েন ইনায়ত। তার পর তিনি প্রকাশ করে দেন রবীন্দ্র কৌশিকের আসল পরিচয়।



সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, শিয়ালকোটের এক ঘাঁটিতে দুবছর জেরার নামে রবীন্দ্র কৌশিকের উপর চলে
অকথ্য অত্যাচার। ১৯৮৫ সালে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। পরে পাকিস্তান হাইকোর্টে
তাঁর শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে পরিবর্তিত হয়। এরপর ১৬ বছর ধরে শিয়ালকোট
, কোট লখপত, মিয়ানওয়ালি-সহ পাকিস্তানের
বিভিন্ন শহরের কারাগারে বন্দি ছিলেন রবীন্দ্র। দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে নির্মম
অত্যাচার সহ্য করার পরে ২০০১ সালে রবীন্দ্র কৌশিক মারা যান মুলতানের কেন্দ্রীয়
কারাগারে। যক্ষ্মা-সহ একাধিক অসুখে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। এর ঠিক দু
বছর পরে ভারতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা
যান তাঁর বাবা। অবশ্য রবীন্দ্রর মা অমলাদেবী বেঁচে ছিলেন ২০০৬ অবধি। তত দিন
পর্যন্ত ভারত সরকারের তরফে প্রতি মাসে সামান্য মাসোহারা পাঠানো হত বলে
, জানিয়েছেন তাঁর পরিজনরা।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন