এই
গুহাপথে কাশ্মীর থেকে রাশিয়ায় যাওয়া যায়
ভারতের
কাশ্মীরে এমন এক প্রকৃতিক গুহা রয়েছে যার মধ্য দিয়ে গেলে নাকি রাশিয়ায় পৌছে যাওয়া
যায়। অতীতে এই গুহাপথ দিয়েই রাশিয়া থেকে লোক আসত বলে স্থানীয় লোকেদের বিশ্বাস।
কাশ্মীরের লোলাব উপত্যকার কুপওয়ারায় লাশতিয়াল এবং মাধমাদু গ্রাম দু’টির মাঝে একটি বিশাল পাথর রয়েছে, তবে কবে থেকে এটি এখানে আছে
তা সঠিকভাবে কারো জানা নেই। বাইরে থেকে এটি আপাত ভাবে পাথর বলে মনে হলেও এটা আসলে
পাহাড়ের একটা অংশ। তার গায়ে রয়েছে পর পর সাতটি প্রবেশপথ।
কিন্তু
এই প্রাকৃতিক গুহাপথকে পরবর্তী সময়ে মানুষ নিজের মতো করে সাজিয়ে নিয়েছিল, সেটা এই গুহাটিকে দেখলে বোঝা যায়। কিন্তু কবে এবং
কারা এই গুহাপথ ব্যবহার করত, ইতিহাসে
তার কোন প্রমান্য তথ্য নেই। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা অনেকে দাবি করেন, তাঁরা তাঁদের পরিবারের
বয়স্কদের কাছে শুনেছেন, অতীতে
ওই গুহাপথ দিয়ে রাশিয়া থেকে মানুষ আসতেন ভারতে।
সাত
দরজা থেকে এই পাথরের নাম ‘সাতবারন’। আর স্থানীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, এই সাতটি গুহা পথের কোন একটির
অন্য প্রান্ত গিয়ে শেষ হয়েছে রাশিয়ায়। সেই বিশ্বাস থেকে স্থানীয় এলাকার নাম হয়েছে
কিলা-এ-রুশ বা কালারুশ, অর্থাৎ
রুশদেশের কেল্লা।
২০১৮
সালে এই গুহার রহস্যভেদ করতে এসেছিলেন আমেরিকার ভার্জিনিয়া থেকে অ্যাম্বার এবং
এরিক ফায়েস। এই দম্পতি অভিযাত্রী গুহার তিনটি প্রবেশপথ নিয়ে তাদের অনুসন্ধান
শুরু করেছিলেন। এই অভিযানে তাঁদের সাহায্য
করেছিলেন ওহায়োর গুহাবিশেষজ্ঞ ডাস্টিন কিসনার এবং ভারতীয় অভিযাত্রী তথা দোভাষী
ভামসি রামকৃষ্ণ এবং কেরলের একজন ইঞ্জিনিয়ার।
অভিযানের
পরে নিজেদের গবেষণাপত্রে এই ফায়েস দম্পতি বলেছিলেন, স্থানীয়
বাসিন্দাদের কাছে তাঁরা শুনেছেন যে, ঐ
পাথর নিছক পাহাড়ের অংশ নয়। বরং, সমুদ্রপৃষ্ঠ
থেকে ১৯০০ মিটার বা ৬২৩৪ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই সাতবারন আদতে একটি প্রাচীন
মন্দির। যেখানে নাকি পুজো করতেন মহাভারতে অজ্ঞাতবাসে থাকা পঞ্চপাণ্ডব। পরে কোনও এক
সময়ে প্রাকৃতিক কারণে ওই মন্দির ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল বা, ধ্বংস করা হয়েছিল। স্থানীয়
বাসিন্দাদের কাছে এই তত্ত্বের নিদর্শন পেয়েছিলেন মার্কিন অভিযাত্রীরা।
তবে
এই গুহার ভিতরে সব পথই কিছু দূর যাওয়ার পরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বিস্ফোরণের সাহায্যে
অবশ্য গুহার পথগুলি সম্পূর্ণ বন্ধ করার চেষ্টা করেছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। এই গুহায়
হিংস্র ভাল্লুক ডেরা বাঁধত এবং গ্রামে হামলা করত বলে অভিযোগ ছিল। তবে বর্তমানে
হিমালয়ের সজারু ছাড়া আর কোনও প্রাণীর অস্তিত্ব মেলেনি সেখানে।
ঐতিহাসিক
কোনও প্রমাণ না পাওয়া গেলেও এই গুহা যে খনিজ সম্পদে ভরপুর, সে বিষয়ে নিশ্চিত মার্কিন
অনুসন্ধানকারী দম্পতি। পাশাপাশি, বহু
দিন ধরে সন্দেহ ছিল, এই
গুহাপথে হয়তো জঙ্গিরা ভারতে প্রবেশ করে বাইরের দেশ থেকে। কিন্তু এই অনুসন্ধান সেই
আশঙ্কাও কার্যত সম্পূর্ণরূপে দূর করেছে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন