যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে পশ্চিম এশিয়ায়।
প্যালেস্তিনীয় সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের আক্রমণের পর ইজরায়েল যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। সেই
যুদ্ধ মঙ্গলবার পা দিল ২৫ তম দিনে। এই যদ্ধে মত্যু মিছিল দেখা যাচ্ছে গাজা-য়।
প্যালেস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দাবি, ইতিমধ্যে
গাজায় ৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যাঁদের মধ্যে রয়েছে অনেক শিশুও।
অবশ্য এই যদ্ধ এখনই থামার কোন লক্ষণ দেখা
যাচ্ছে না। এই যুদ্ধে আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দেশগুলি
পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ইজরায়েল-এর। তাদের যুক্তি হামাস প্রথমে ইজরায়েলের উপর
আক্রমণ করেছিল, তাই
ইজরায়েলের অধিকার রয়েছে তাদের নিজেদের রক্ষা করার।
বর্তমানে ইজরায়েলী সেনা গাজায় স্থলপথে অভিযান
শুরু করেছে। ইজরায়েলী সেনাবাহিনী জানিয়েছে, হামাসের
হাতে বন্দি ইজরায়েলিদের মুক্ত করাই তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য। যুদ্ধে তাদের জয়
নিশ্চিত বলে জানিয়েছেন, ইজরায়েলের
প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার বিষয়ে তিনি আশাবাদী
এবং আত্মবিশ্বাসী।
পশ্চিম এশিয়ার পশ্চিম প্রান্তে ভূমধ্যসাগরের
ধারে রয়েছে দুটি দেশ ইজরায়েল এবং প্যালেস্তাইন। আর এই দুটি দেশের দ্বন্দ্বে আখেরে
লাভ হচ্ছে ১৭০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আরবের একটি ছোট্ট দেশ কাতার-এর।
অনেকের মতে পশ্চিম এশিয়ায় আসলে 'ডবল গেম' খেলে
কাতার দেশ। তারা প্রকাশ্যে হামাসকে সমর্থন করে। আবার সময় বিশেষে তাদের সঙ্গে
সমঝোতা করে বা অন্য দেশের সঙ্গে সমঝোতা করায়। ২০০৭ সাল থেকে গাজা স্ট্রিপ হামাসের
দখলে। তারাই ওই এলাকার প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দেশগুলি
হামাসকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসাবে ঘোষণা করেছে। কারণ হামাস-এর মতে, জিহাদ ছাড়া প্যালেস্তাইন
সমস্যা সমাধানের আর কোনও উপায় নেই।
হামাস কোনও আন্তর্জাতিক শান্তিচুক্তিকে সমর্থন
করে না। তারা জানিয়েছে, তাদের
মূল লক্ষ্য হল ইজরায়েলের ভূখণ্ড দখল করা এবং সেখান থেকে ইহুদীদের বিতাড়িত করা।
একাধিক সন্ত্রাসবাদী হামলাও হামাস করেছে বলে অভিযোগ। এইসব কথা জানার পরেও ২০০৭ সাল
থেকে হামাসকে সমর্থন করে কাতার। আবার ২০১২ সালে প্রথমবার কাতারের রাষ্ট্রপ্রধান
গাজায় যান। শহরটির পুনর্গঠনের জন্য তিনি ৪০ লক্ষ ডলার অর্থসাহায্যও করেছিলেন। তার
পর থেক অর্থসাহায্য কখনও বন্ধ হয়নি। কাতার থেকে এখনও গাজ়ায় প্রতি মাসে তিন কোটি
ডলার পাঠানো হয়।
অনেক ইসলামিক দেশের মতে, হামাস কোনও সন্ত্রাসবাদী
সংগঠন নয়। বরং তারা একটি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের গোষ্ঠী, যারা প্যালেস্তাইনের জন্য
লড়াই করছে। কিন্তু অদ্ভুদ বিষয় হল হামাসের অধিকংশ শীর্ষ নেতা গাজ়ায় থাকেন না। ২০১২ সাল পর্যন্ত হামাসের
নেতারা ছিলেন সিরিয়াতে। আবার বর্তমানে কাতারেও তাদের অনেক নেতা থাকেন।
২০১৯ সালে হামাসের এক শীর্ষ নেতা গাজ়া থেকে
সাময়িক ভাবে বিদেশে ঘুরতে যাচ্ছেন বলে বেরিয়েছিলেন। তার পর থেকে কাতারের দোহায় বসে
তিনি হামাসের বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা করে চলেছেন। অর্থাৎ, কাতার শুধু গাজ়ায়
অর্থসাহায্যই করে না। হামাসকে তাদের বিভিন্ন অভিযান পরিচালনাতেও সাহায্য করে। তবে
শুধু হামাসের সাহায্যকারী নয়, কাতারের
ভূমিকা আরও বেশি।
পশ্চিম এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক সঙ্কটে কাতার বরাবর
সমঝোতাকারীর ভূমিকা পালন করে এসেছে। হামাস হোক বা লেবাননের হিজ়বুল্লা কিংবা
আফগানিস্তানের তালিবান, কাতারের
সঙ্গে সকলেরই সুসম্পর্ক রয়েছে। পশ্চিমি দেশগুলির সঙ্গে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির
মধ্যস্থতার কাজ করে কাতার।
কাতারে আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ একটি সেনাঘাঁটি
রয়েছে। যার নাম আল উডেড বিমানঘাঁটি। ২০১৪ সালে আমেরিকান এক সার্জেন্টকে তালিবান
নিজেদের হেফাজতে নিয়েছিল। সেই সময় মধ্যস্থতার কাজ করেছিল এই কাতার। কাতার
তালিবানের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আমেরিকান সার্জেন্টকে মুক্ত করেছিল। পরিবর্তে
আমেরিকাকে তাদের জেল থেকে পাঁচ তালিবান সদস্যকে মুক্তি দিতে হয়। নানা সময়ে এমন
নানা সহযোগিতার কারণে পশ্চিমি দুনিয়ার কাছে কাতার এখন ‘পরম মিত্র' একটি
অগণতান্ত্রিক দেশ।
এক দিকে সমঝোতার মাধ্যমে আমেরিকার ঘনিষ্ঠ হয়ে
উঠেছে কাতার, অন্য
দিকে আবার তারাই বিপরীত অবস্থানে গিয়ে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থনও করে চলেছে। কাতার যে
সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলিকে গোপনে সাহায্য করে, তাদের
অর্থ এবং অস্ত্রের জোগান দেয়, সে
বিষয়ে সৌদি আরব কিংবা সংযুক্ত আরব আমিরশাহি অর্থাৎ UAE একাধিক বার অভিযোগ করেছে।
কিন্তু সব জেনেও কাতারের বিরুদ্ধে আমেরিকা বা পশ্চিমী দেশ কোনও পদক্ষেপ নেয় না।
কাতার সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ
সম্পর্ক রেখে তাদের সঙ্গে সমঝোতার রাস্তা প্রস্তুত রাখে। এ ভাবে তারা ধীরে ধীরে
গোটা বিশ্বের কাছে ‘ত্রাতা’ হিসাবে নিজেদের তুলে ধরতে পেরেছে। কাতারের
মতো সমঝোতাকারী দেশের সবচেয়ে বেশি লাভ হয় যুদ্ধের সময়। কারণ তারা উভয় পক্ষের সঙ্গেই
কথা বলে আলোচনার মাধ্যমে যে কোনও পরিস্থিতির মধ্যস্থতা করতে সক্ষম।
ইজ়রায়েল এবং হামাসের যুদ্ধের আবহেও তাই
কাতারের দর বেড়ে গিয়েছে। আমেরিকা কিংবা আরব দেশগুলি জানে, সমঝোতার সময় এলে একমাত্র
কাতারই পারবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে। তাই গণতন্ত্র বা সন্ত্রসবাদ নয় যেখান
আমেরিকার স্বার্থ জড়িয়ে থাকে সে দেশ আমেরিকার কাছে হয় ভালো আর যেখানে আমেরিকার
স্বার্থ জড়িত থাকে না সে দেশ হয় খারাপ যেমন- আফগানিস্তান।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন