Valentines নামটি এলো কোথা থেকে?
সঠিক
ভাবে বলা যায় না কোথা থেকে ভ্যালেন্টাইনস্ ডে বলতে ভালোবাসার দিবস উৎযাপনের প্রথা
চালু হল। কারণ লাতিন শব্দ ‘ভ্যালেন্টাইনাস’ বা
‘ভ্যালেন্টাইন’ শব্দের
অর্থ হল সুযোগ্য বা শক্তিশালী। তবে ইতিহাসে মোটামুটি তিন ধরনের অভিমত উঠে আসে এই
দিনটি উৎযাপনের ব্যাপারে:-
প্রথম
অভিমত,
রোমান
ক্যাথলিকদের নথি অনুযায়ী, দ্বিতীয়
থেকে অষ্টম শতক অবধি খ্রিস্টধর্মের অন্তত এক ডজন সন্তের নামের পাশে যুক্ত হয়েছে ‘ভ্যালেন্টাইন’ উপাধি। তাঁদের অনেকেই রাজরোষে প্রাণ দিয়েছিলেন। তাই
ঠিক কার জন্য ভ্যালেন্টাইন ডে পালিত হয়, তা
নিয়ে অনেক জটিলতা দেখা দেয়। ৮২৭ খ্রিস্টাব্দে এই উপাধি পাওয়া গিয়েছিল একজন পোপের
নামের পাশেও। তবে তাঁর সম্বন্ধে ইতিহাসে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায় না।
যাকে
কেন্দ্র করে আজকের দিনে ভ্যালেন্টাইনস ডে উদ্যাপিত হয়, তিনি ২৭০ খ্রিস্টাব্দে মারা
যান। ত্রয়োদশ শতকের একটি নথি অনুযায়ী, সন্ত
ভ্যালেন্টাইনকে রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্লদিয়াস প্রাণদণ্ড দিয়েছিলেন। কারণ তিনি
খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী বিভিন্ন তরুন-তরুণীদের জুটিকে বিয়ে দিয়ে ঘর বাঁধতে সাহায্য
করছিলেন।
সম্রাট
দ্বিতীয় ক্লদিয়াস বিশ্বাস করতেন, অবিবাহিত
তরুণদের দিয়ে শক্তিশালী সৈন্যবাহিনী গঠন করা যায়। ফলে তিনি তাঁর সাম্রাজ্যে বিয়ে
নিষিদ্ধ করে দেন।
সম্রাটের
এই নির্দেশ ভালভাবে নেননি সন্ত ভ্যালেন্টাইন। তিনি গোপনে বিয়ে দিতে থাকেন খ্রিস্ট
ধর্মাবলম্বী তরুণ-তরুণীদের। তাঁর এই বিরুদ্ধাচরণে ক্ষিপ্ত ক্লদিয়াস তাঁর
প্রাণদণ্ডের নির্দেশ দেন। সম্রাটের নির্দেশে শরীর থেকে মাথা আলাদা করে সন্ত
ভ্যালেন্টাইনকে প্রাণদণ্ড দেওয়া হয়।
আবার
আরও একটি নথি থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, মধ্যযুগে
ইতালির তার্নি শহরের বিশপকেও প্রাণদণ্ড দিয়েছিলেন দ্বিতীয় ক্লদিয়াস। দু’টি ঘটনার মধ্যে সামঞ্জস্য থাকায় অনেকে মনে
করেন, এই
বিশপ আর রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্লদিয়াসের বিরুদ্ধে গিয়ে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী
তরুণ-তরুণীদের বিয়ে দেওয়া সন্ত ভ্যালেন্টাইন একই ব্যক্তি।
তৃতীয়
শতকের ১৪ ফেব্রুয়ারি বা তার কাছাকাছি কোন এক দিনে রোমের শহরতলিতে হত্যা করা হয়েছিল
সন্ত ভ্যালেন্টাইনকে। প্রথমে ভ্যালেন্টাইন ডে ছিল আত্মাহুতির দিবস। পরে মধ্যযুগে
এর সঙ্গে প্রেমের মেলবন্ধন করান জিওফ্রে চসার। তাঁর রচনাতেই প্রথম এই দিনের সঙ্গে
যুক্ত হয় প্রেমের অনুসঙ্গ। ক্রমে সেই ধারণা জনপ্রিয় হয়। এখন ভ্যালেন্টাইনস ডে আর
প্রেম এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।
দ্বিতীয়
অভিমত,
এখনও
অবধি সন্ত ভ্যালেন্তাইন পরিচয়ে একজনেরই সাধিকার সন্ধান পাওয়া যায়। কোথাও আবার তাঁর
নাম সন্ত ভ্যালেন্টিনা। ৩০৮ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে তাঁকে প্রাণদণ্ড দেওয়া হয়
প্যালেস্তাইনে। তাই ইস্টার্ন অর্থোডক্স চার্চ বছরে দু’বার, ৬
জুলাই এবং ৩০ জুলাই ভ্যালেন্টাইনস ডে পালন করে।
তৃতীয়
অভিমত,
খ্রিস্টধর্মের
প্রসারের আগে পৌত্তলিক যুগেও শীতের শেষে বসন্তের শুরুতে একটি পার্বণ উদ্যাপনের
রীতি প্রচলিত ছিল। প্রাচীন রোমান সভ্যতায় মধ্য ফেব্রুয়ারি ছিল উর্বরতার ঈশ্বর
ফনাস-এর দিন। সেই পার্বণে গ্রামের অবিবাহিত যুবকরা একটি বাক্স থেকে চিরকুট তুলত। তাতে
লেখা থাকত কুমারী মেয়েদের নাম। যে যুবক যে তরুণীর নাম তুলতো, তারা সে দিন থেকে প্রেমের
জুটি বলে বিবেচিত হতো। মাঝে মাঝে এ সম্পর্ক পৌঁছত বিয়ে অবধিও।
খ্রিস্ট
ধর্মের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির পরে পঞ্চম শতাব্দীতেও এই রীতি প্রচলিত ছিল। কিন্তু তারপর
ধীরে ধীরে এই লোকাচার বিলুপ্ত হয়ে যায়। ইতিহাসবিদ ও গবেষকদের মতে, প্রাচীন সভ্যতার উর্বরতার
উৎসবও বিলীন হয়ে যায়।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন