বুধবার, ৩১ মে, ২০২৩

পৃথিবীতে পাওয়া এই পাথরগুলি কি ভিন্‌গ্রহী'দের সমাধির ফলক?

পৃথিবীতে আবিষ্কৃত একটি পাথরকে, তাকে মনে করা হচ্ছে ভিন্‌গ্রহী প্রণীদের সমাধির পাথর। পাথরটি দেখতে অনেকটা গোলাকার চাকতির মতো। মাঝে রয়েছে আরো একটি গোলাকার গর্ত। অনেকটা দেখতে ঠিক রেকর্ড প্লেয়ারের মতো। এদের বলা হয় ড্রোপা পাথর। ইতিহাসবিদদের একাংশ মনে করেন, এই ড্রোপা পাথরের বয়স ১২ হাজার বছর।

১৯৩৮ সাল নাগাদ প্রায় ৭১৬টি এই পাথরের সন্ধান পাওয়া যায়। এগুলির ব্যাস প্রায় এক ফুট।চিন-তিব্বত সীমান্তে বাইয়ান-কারা-উলা পর্বতের পাদদেশে দাঁড়িয়ে ছিল বেশ কয়েকটি গুহা। সেই গুহার মধ্যে ছিল অসংখ্য কক্ষ। আর সেই কক্ষের প্রতিটিতে ছিল একটি করে সমাধি। চিনা অধ্যাপক চি-পু-তেই এই সমাধিগুলির সন্ধান পেয়েছিলেন। পর পর সারি বেঁধে শোওয়ানো ছিল সে সব সমাধি। আর সমাধির ভিতর অদ্ভুত কিছু কঙ্কাল দেখেছিলেন তিনি। কঙ্কালের উচ্চতা ৪ ফুট। মাথাটা অদ্ভুত রকমের বড়।প্রথম বার দেখে চিনা অধ্যাপকের মনে হয়েছিল, সেগুলি বাচ্চাদের কঙ্কাল। পরে বুঝেছিলেন, সেগুলি প্রাপ্তবয়স্কদের।

আর এই সব সমাধির পাশে রাখা ছিল গোলাকার পাথরের চাকতি। চিনা অধ্যাপক মনে করেন, সমাধির ফলক হিসাবে সেই গোলাকার পাথরের চাকতিগুলি ব্যবহার করা হয়েছিল। সেই পাথরের চাকতিগুলিতে হেলমেট পরা মানুষের মাথা খোদাই করা ছিল। তা ছাড়া চাঁদ, সূর্য, তারা, পৃথিবীও খোদাই করা ছিল। আর পাথরের চাকতিগুলি অর্ধেক মাটিতে পোঁতা ছিল।

পাথরের চাকতির গায়ে খোদাই করা জিনিসগুলি দেখে ভারী অবাক হন ইতিহাসবিদেরা। গুহার কার্বন ডেটিং করিয়ে বোঝা যায় যে, সেগুলি ১২ বাজার বছরের পুরনো। এ বার অনেকেই প্রশ্ন করেন, অত বছর আগে চাঁদ, সূর্য, তারার কথা কী ভাবে জানালেন মানুষ? তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে ঢের।

অবশ্য এই অনুসন্ধানের পর দেশে ফিরে অধ্যাপক চি-পু-তেই একটি অদ্ভুত রিপোর্ট প্রকাশ করেন। তাতে তিনি দাবি করেন, গুহায় মেলা ওই কঙ্কাল আসলে কোনও গোরিলা বা হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের বাসিন্দাদের। আর এই পাথরের চাকতিগুলিকে নিয়ে তিনি দাবি করেন, সেগুলি ১২ হাজার বছরের পুরনো নয়। অনেক পরে কেউ সেগুলি ওই কবরে বসিয়ে দেন। এই রিপোর্টের জন্য কটাক্ষের মুখে পড়েন চিনা অধ্যাপক।

এর বেশ কয়েক বছর পর এই ড্রোপা পাথর নিয়ে গবেষণা শুরু করেন সুম উম নুই। পাহাড়ের গুহা থেকে ৭১৬টি পাথরের চাকতি তিনি তুলে নিয়ে আসেন গবেষণার জন্য। দেখেন, ওই পাথরের গায়ে খোদাই করা রয়েছে লিপি।

দীর্ঘকাল ধরে ড্রোপার গায়ে খোদাই করা লিপির পাঠোদ্ধারের চেষ্টা করে যান সুম। তবে লিপির বেশীরভাগ অংশই তিনি বুঝতে পারেননি। গবেষক সুমের দাবি, ওই পাথরে আসলে ড্রোপাদের কথা লেখা রয়েছে। ড্রোপারা নাকি ভিন্‌গ্রহী।তাঁর মতে হাজার হাজার বছর আগে ওই ড্রোপাদের একটি উড়ান নাকি পৃথিবীতে আছড়ে পড়েছিল। তাতে মৃত্যু হয়েছিল কয়েক জনের। বাকিরা ভয়ে লুকিয়ে ছিলেন গুহায়।ওই এলাকায় তখন বসবাস করত হাম নামে এক জনজাতি। ক্রমে তাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে ড্রোপাদের। গবেষক সুমের দাবি, ভিন্‌গ্রহীদের উড়ানটি কোনও দিন আর সারিয়ে তুলতে পারেনি ড্রোপারা। তাই আর ফেরাও হয়নি। অবশ্য সুমের এই গবেষণাপত্র ছাপতে দেয়নি বেজিং বিশ্ববিদ্যালয়। তাঁকে নিয়ে কৌতুক করা হয়। ভেঙে পড়েন সুম। তিনি চিন ছেড়ে জাপানে চলে যান। সেখানেই বাকি জীবন কাটিয়েছিলেন।

এরপর রাশিয়াও এই ড্রোপা পাথর নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে। চিনের অনুমতি নিয়ে কিছু পাথর দেশে নিয়ে আসে তারা। গবেষণায় দেখা যায়, ওই পাথরে প্রচুর পরিমাণে কোবাল্ট রয়েছে। সঙ্গে রয়েছে অন্য ধাতু।রাশিয়ার গবেষকেরা দাবি করেন, ওই পাথর বিদ্যুৎ পরিবহণে সক্ষম। তার মধ্যে দিয়ে অদ্ভুত ভাবে প্রবাহিত হচ্ছে বিদ্যুৎ, যা থেকে নাকি তড়িদাহত হন কয়েক জন। রাশিয়ার এক জন গবেষক দাবি করেন, এই পাথরগুলি হাজার হাজার বছরের পুরনো।

পরে অস্ট্রিয়ার এক গবেষক এই ড্রোপা পাথর নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। চিনের যে জাদুঘরে ওই পাথর রাখা ছিল, তার ম্যানেজারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন আর্নস্ট ওয়েগেরার। তাঁকে ড্রোপা পাথর দিতে রাজি হন জাদুঘর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু যে দিন দেওয়ার কথা, তার আগে নিখোঁজ হয়ে যান ম্যানেজার। সঙ্গে সেই পাথর দুটিও।

বহু গবেষকই ড্রোপা পাথরের নেপথ্যে ভিন্‌গ্রহী তত্ত্ব মানতে চাননি। তাঁদের প্রশ্ন, ড্রোপার লিপির যে পাঠোদ্ধার করা হয়েছিল, তা যে সঠিক, কী ভাবে বোঝা যাবে?অনেকে আবার মনে করেন, গুহার ভিতর যে কঙ্কাল ছিল, তা কোনও ভিন্‌গ্রহীর নয়। বরং স্থানীয়দেরই। সে সময় ওই অঞ্চলের মানুষের আকৃতি ওই রকমই ছিল।তবে অত হাজার বছর আগে সত্যিই কি নেমেছিল ভিন্‌গ্রহীরা? নাকি সবটাই কল্পনা? কী লেখা আছে ড্রোপা পাথরের গায়ে? আজও তার সদুত্তর মেলেনি।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন