বুধ গ্রহ আসলে কি? কেমন তার আবহাওয়া?

বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন

কলকাতায় প্রথম ধর্মঘট কবে এবং কেন হয়েছিল?

বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন

বিভিন্ন প্রাণীর রেচন অঙ্গের নাম ও তার ছবি

বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন

ভারতের ক্ষমতা হস্তান্তর আইন

বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন

সালোকসংশ্লেষ সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য

বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন

হিন্দু তথা সনাতন ধর্মের সমস্ত ধর্ম গ্রন্থসমূহ

বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন

বুধবার, ১০ জুলাই, ২০২৪

পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের ‘রোসাঘরে’ লুকিয়ে থাকা রহস্য

 

রথযাত্রা, ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের পুরী হল এর পিঠস্থান। আষাঢ়ের শুক্লা দ্বাদশীর দিন জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রা রথে চড়ে মাসির বাড়ি যান। এই উৎসবের নামই হল রথযাত্রা। সাতদিন সেখানে কাটিয়ে আবার তাঁরা ঘরে ফেরেন। বাংলার রথযাত্রার ইতিহাস প্রাচীন। বহুযুগ আগে থেকেই জগন্নাথকে কেন্দ্র করে এমন সাংস্কৃতিক উৎসব হয়ে আসছে বাংলায়। আর শ্রীচৈতন্যের সময়ে এই রথযাত্রা উৎসবের সঙ্গে বাঙালির যোগাযোগ আরও গাঢ় হয়েছে।

রথযাত্রা উপলক্ষে বিপুল জনসমাগম হয় শ্রীক্ষেত্র পুরীতে। যদিও পুরীর মন্দিরে, প্রতিদিনই জগন্নাথদেবকে ছাপ্পান্ন ভোগ নিবেদন করা হয়। তবু রথযাত্রা উপলক্ষে বিশেষ আয়োজন করা হয় এ-সময়ে। ভোগ রান্নার পুরো আয়োজনটাই হয় মন্দিরের বিরাট হেঁশেলে। এই হেঁশেলকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রান্নাঘরও বলা হয়ে থাকে।

কথিত আছে, পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের মহাপ্রসাদের এমনই মহিমা যে, কোনও দিন সেখানে প্রসাদ বাড়তিও হয় না, আবার কমতিও পড়ে না। অর্থাৎ কারো সেখানে প্রসাদ না পেয়ে ফিরতে হয় না। পুরীর জগন্নাথের মন্দিরে ব্যবহৃত হয় না কোনও প্রকারের ধাতব বাসনপত্র। এই মন্দিরে কোন বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিও নেই।

মহাপ্রসাদের পুরো রান্নাটাই করা হয় মাটির পাত্রে। এখানে কোনও পুরনো পাত্রে রান্না করা হয় না, প্রতিদিন নতুন পাত্রেই রান্না করা হয়। অর্থাৎ প্রতিটি পাত্র রান্নার জন্য একবারই ব্যবহৃত হয়। একদল খালি মাটি দিয়ে পাত্র বানায়, আর একদল তা সরবরাহ করে রান্নাঘরে।

পুরীর জগন্নাথের এই মন্দিরের পিছনে একটি বিরাট হেঁশেলে বছরের ৩৬৫দিন তৈরী হয় ভোগ। একে রোসাঘর বলে। মন্দিরের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে রোসাঘরের অবস্থান। রোসাঘরে রয়েছে ৭৫২টি উনুন। হেঁশেলে ভোগ তৈরির কাজ করেন প্রায় ৬০০ জন রাঁধুনি ও তাঁদের সাহায্যের জন্য থাকেন প্রায় ৪০০ জন সেবক। রোসাঘরটি প্রায় ১৫০ ফুট লম্বা, ১০০ ফুট চওড়া। হেঁশেলের উচ্চতা প্রায় ২০ ফুট। হেঁশেলের মধ্যে প্রায় ৩২টি কক্ষ রয়েছে। এখানে রান্নার পদ্ধতিটিও বেশ অভিনব। প্রতিটি উনুনের রয়েছে একটি করে বড় মুখ। তার চারপাশে আরও বেশ কয়েকটি ছোট ছোট মুখ থাকে। উনুনের মুখে সবচেয়ে বড় মাটির হাঁড়িতে অন্ন বসানো হয়। তার উপরে সাতটা থেকে নটা পর্যন্ত ক্রমশ ছোট হতে থাকা হাঁড়িতে নানা ধরনের তরকারি, পায়েস রান্না হয়।

একেবারে নীচের পাত্র থেকে ওঠা বাষ্পের ভাপে রান্না হয় উপরের পাত্রগুলিতে থাকা শাকসব্জি, অন্ন এবং মিষ্টান্ন । রান্নার সময়ে অন্ন কিংবা শাকসব্জিতে কোনও ভাবেই হাত দেওয়া হয় না বা নাড়াচাড়া করা হয় না। প্রত্যেকটি পাত্রে আলাদা আলাদা ভোগ রান্না করা হয়। বিস্ময়কর ভাবে সবার আগে সবচেয়ে উপরে থাকা পাত্রটির রান্না শেষ হয়। তার পরে রান্না শেষ হয় তার ঠিক নীচে থাকা পাত্রটির। এ ভাবে সব শেষে সুসিদ্ধ হয় উনুনের উপরে রাখা শেষ হাঁড়ির ভোগ।

মাটির হাঁড়ির মধ্যে মূলত ফুটন্ত জলে সব্জি এবং মশলা দিয়ে চলতে থাকে মহাপ্রভুর রান্না। চিনি নয়, রান্নায় ব্যবহার করা হয় গুড়। এ ছাড়া, কোনও রকম গুঁড়ো মশলা নয়, বাটা মশলার ব্যবহার হয়। মশলার মধ্যে মূলত থাকে এলাচ, বড় এলাচ, দারচিনি, গোলমরিচ, আদা, কালো সর্ষে, জোয়ান, লবঙ্গ, জায়ফল, হলুদ, নুন।কোনও ধরনের বিদেশি সব্জি ব্যবহার করা হয় না। পেঁপে, আলু, টম্যাটো, কাঁচা লঙ্কা জাতীয় কোনও রকম আনাজ প্রসাদ রান্নায় ব্যবহারের চল নেই। মূলত দেশীয় সব্জি, যেমন রাঙাআলু, পটল, ঝিঙে, কাঁচকলা, কাঁকরোল ইত্যাদি থাকে।

জগন্নাথ, বলরাম আর সুভদ্রার জন্য রোজ ৫৬টি পদ রান্না করা হয় রোসাঘরে। এই পদগুলিকে মূলত দুটি ভাগে ভাগ করা হয়- পাক্কা এবং সুক্কাপাক্কা বলা হয় সেই খাবারগুলিকে, যেগুলি সেদ্ধ করা হয়। যেমন ডাল, চাল, খিচুড়ি এবং সব রকমের সব্জি। অন্য দিকে, সুক্কা বলা হয় গজা, মিষ্টি আর বিভিন্ন ধরনের পিঠেকে।

রন্ধনশালার চত্বরে দুটি কুয়ো আছে, যাদের নাম গঙ্গা ও যমুনা। কুয়াগুলির ব্যাস ১০ ফুট, গভীরতা প্রায় ১০০ ফুট। এই কুয়ো দুটির জল ব্যবহার করেই ভোগ রান্নার কাজ করা হয়। হেঁশেলের রাঁধুনিরা বংশপরম্পরায় এই কাজ করে আসছেন। হেঁশেলে রান্না শুরুর আগে রাঁধুনিদের খাবার খেয়ে নিতে হয়। তার পর পান খেয়ে, স্নান সেরে, ভিজে গামছা পরে, হেঁশেলের পুজো করে শুরু হয় রান্নার প্রস্তুতি।

মূল রান্নাঘরের ভিতর সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ হলেও বর্তমানে হেঁশেলের চারপাশটা ঘুরে দেখার সুযোগ পান ভক্তেরা। তার জন্য ভক্তদের আলাদা করে টিকিট কাটতে হয়। মন্দিরের উত্তর-পূর্ব কোণে আছে আনন্দবাজার। জগন্নাথদেবের রান্নাঘরে রান্না হওয়া প্রসাদ ভোগ মণ্ডপ থেকে চলে আসে আনন্দবাজারে। দিনে লক্ষ লক্ষ টাকার প্রসাদ বিক্রি হয় সেখান থেকে।

যুগ বদলায়, মানুষ মারা যায়, পাল্টে যায় জগন্নাথদেবের মন্দিরের রাঁধুনিরাও। কেবল পাল্টায় না শুধু জগন্নাথ মন্দিরের রন্ধনশালায় তৈরি হওয়া ভোগের স্বর্গীয় স্বাদ। কীভাবে বছরের পর বছর ধরে প্রসাদের স্বাদ এক থাকে, তা অবাক করে ভক্তদের।

মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৩

ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন যুদ্ধে আখেরে লাভ হচ্ছে আরবের একটি দেশের

যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে পশ্চিম এশিয়ায়। প্যালেস্তিনীয় সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের আক্রমণের পর ইজরায়েল যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। সেই যুদ্ধ মঙ্গলবার পা দিল ২৫ তম দিনে। এই যদ্ধে মত্যু মিছিল দেখা যাচ্ছে গাজা-য়। প্যালেস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দাবি, ইতিমধ্যে গাজায় ৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যাঁদের মধ্যে রয়েছে অনেক শিশুও।

অবশ্য এই যদ্ধ এখনই থামার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এই যুদ্ধে আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দেশগুলি  পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ইজরায়েল-এর। তাদের যুক্তি হামাস প্রথমে ইজরায়েলের উপর আক্রমণ করেছিল, তাই ইজরায়েলের অধিকার রয়েছে তাদের নিজেদের রক্ষা করার।

বর্তমানে ইজরায়েলী সেনা গাজায় স্থলপথে অভিযান শুরু করেছে। ইজরায়েলী সেনাবাহিনী জানিয়েছে, হামাসের হাতে বন্দি ইজরায়েলিদের মুক্ত করাই তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য। যুদ্ধে তাদের জয় নিশ্চিত বলে জানিয়েছেন, ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার বিষয়ে তিনি আশাবাদী এবং আত্মবিশ্বাসী।

পশ্চিম এশিয়ার পশ্চিম প্রান্তে ভূমধ্যসাগরের ধারে রয়েছে দুটি দেশ ইজরায়েল এবং প্যালেস্তাইন। আর এই দুটি দেশের দ্বন্দ্বে আখেরে লাভ হচ্ছে ১৭০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আরবের একটি ছোট্ট দেশ কাতার-এর।

অনেকের মতে পশ্চিম এশিয়ায় আসলে 'ডবল গেম' খেলে কাতার দেশ। তারা প্রকাশ্যে হামাসকে সমর্থন করে। আবার সময় বিশেষে তাদের সঙ্গে সমঝোতা করে বা অন্য দেশের সঙ্গে সমঝোতা করায়। ২০০৭ সাল থেকে গাজা স্ট্রিপ হামাসের দখলে। তারাই ওই এলাকার প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দেশগুলি হামাসকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসাবে ঘোষণা করেছে। কারণ হামাস-এর মতে, জিহাদ ছাড়া প্যালেস্তাইন সমস্যা সমাধানের আর কোনও উপায় নেই।

হামাস কোনও আন্তর্জাতিক শান্তিচুক্তিকে সমর্থন করে না। তারা জানিয়েছে, তাদের মূল লক্ষ্য হল ইজরায়েলের ভূখণ্ড দখল করা এবং সেখান থেকে ইহুদীদের বিতাড়িত করা। একাধিক সন্ত্রাসবাদী হামলাও হামাস করেছে বলে অভিযোগ। এইসব কথা জানার পরেও ২০০৭ সাল থেকে হামাসকে সমর্থন করে কাতার। আবার ২০১২ সালে প্রথমবার কাতারের রাষ্ট্রপ্রধান গাজায় যান। শহরটির পুনর্গঠনের জন্য তিনি ৪০ লক্ষ ডলার অর্থসাহায্যও করেছিলেন। তার পর থেক অর্থসাহায্য কখনও বন্ধ হয়নি। কাতার থেকে এখনও গাজ়ায় প্রতি মাসে তিন কোটি ডলার পাঠানো হয়।

অনেক ইসলামিক দেশের মতে, হামাস কোনও সন্ত্রাসবাদী সংগঠন নয়। বরং তারা একটি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের গোষ্ঠী, যারা প্যালেস্তাইনের জন্য লড়াই করছে। কিন্তু অদ্ভুদ বিষয় হল হামাসের অধিকংশ শীর্ষ নেতা  গাজ়ায় থাকেন না। ২০১২ সাল পর্যন্ত হামাসের নেতারা ছিলেন সিরিয়াতে। আবার বর্তমানে কাতারেও তাদের অনেক নেতা থাকেন।

২০১৯ সালে হামাসের এক শীর্ষ নেতা গাজ়া থেকে সাময়িক ভাবে বিদেশে ঘুরতে যাচ্ছেন বলে বেরিয়েছিলেন। তার পর থেকে কাতারের দোহায় বসে তিনি হামাসের বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা করে চলেছেন। অর্থাৎ, কাতার শুধু গাজ়ায় অর্থসাহায্যই করে না। হামাসকে তাদের বিভিন্ন অভিযান পরিচালনাতেও সাহায্য করে। তবে শুধু হামাসের সাহায্যকারী নয়, কাতারের ভূমিকা আরও বেশি।

পশ্চিম এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক সঙ্কটে কাতার বরাবর সমঝোতাকারীর ভূমিকা পালন করে এসেছে। হামাস হোক বা লেবাননের হিজ়বুল্লা কিংবা আফগানিস্তানের তালিবান, কাতারের সঙ্গে সকলেরই সুসম্পর্ক রয়েছে। পশ্চিমি দেশগুলির সঙ্গে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির মধ্যস্থতার কাজ করে কাতার।

কাতারে আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ একটি সেনাঘাঁটি রয়েছে। যার নাম আল উডেড বিমানঘাঁটি। ২০১৪ সালে আমেরিকান এক সার্জেন্টকে তালিবান নিজেদের হেফাজতে নিয়েছিল। সেই সময় মধ্যস্থতার কাজ করেছিল এই কাতার। কাতার তালিবানের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আমেরিকান সার্জেন্টকে মুক্ত করেছিল। পরিবর্তে আমেরিকাকে তাদের জেল থেকে পাঁচ তালিবান সদস্যকে মুক্তি দিতে হয়। নানা সময়ে এমন নানা সহযোগিতার কারণে পশ্চিমি দুনিয়ার কাছে কাতার এখন পরম মিত্র' একটি অগণতান্ত্রিক দেশ।

এক দিকে সমঝোতার মাধ্যমে আমেরিকার ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছে কাতার, অন্য দিকে আবার তারাই বিপরীত অবস্থানে গিয়ে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থনও করে চলেছে। কাতার যে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলিকে গোপনে সাহায্য করে, তাদের অর্থ এবং অস্ত্রের জোগান দেয়, সে বিষয়ে সৌদি আরব কিংবা সংযুক্ত আরব আমিরশাহি অর্থাৎ UAE একাধিক বার অভিযোগ করেছে। কিন্তু সব জেনেও কাতারের বিরুদ্ধে আমেরিকা বা পশ্চিমী দেশ কোনও পদক্ষেপ নেয় না।

কাতার সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে তাদের সঙ্গে সমঝোতার রাস্তা প্রস্তুত রাখে। এ ভাবে তারা ধীরে ধীরে গোটা বিশ্বের কাছে ত্রাতা হিসাবে নিজেদের তুলে ধরতে পেরেছে। কাতারের মতো সমঝোতাকারী দেশের সবচেয়ে বেশি লাভ হয় যুদ্ধের সময়। কারণ তারা উভয় পক্ষের সঙ্গেই কথা বলে আলোচনার মাধ্যমে যে কোনও পরিস্থিতির মধ্যস্থতা করতে সক্ষম।

ইজ়রায়েল এবং হামাসের যুদ্ধের আবহেও তাই কাতারের দর বেড়ে গিয়েছে। আমেরিকা কিংবা আরব দেশগুলি জানে, সমঝোতার সময় এলে একমাত্র কাতারই পারবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে। তাই গণতন্ত্র বা সন্ত্রসবাদ নয় যেখান আমেরিকার স্বার্থ জড়িয়ে থাকে সে দেশ আমেরিকার কাছে হয় ভালো আর যেখানে আমেরিকার স্বার্থ জড়িত থাকে না সে দেশ হয় খারাপ যেমন- আফগানিস্তান।


শুক্রবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

আগামী দিনে আর কোন কোন অভিযানের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ইসরো?

ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর সম্প্রতি চন্দ্রঅভিযান-৩ সফল্য পেয়েছে। সেই সঙ্গে দেশ তথা পুরো বিশ্বের কাছে এখন এটাই জিগ্গাস্য যে, আগামী দিনে আর কোন কোন অভিযানের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ইসরো? আর খুশির খবর হলইসরোর আগামী দিনে একাধিক অভিযানের মাধ্যমে ইতিহাস গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

আপাতত ভারত যে মহাকাশ অভিযানগুলি নিয়ে পুরোদমে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম আদিত্য-এল-১। ইতিমধ্যেই সেই অভিযান নিয়ে ইসরোর বিজ্ঞানীদের ব্যস্ততা তুঙ্গে। ইসরোর চেয়ারম্যান এস সোমানাথ জানিয়েছেন, আদিত্য-এল-১ উপগ্রহটি সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে উৎক্ষেপণ করা হবে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, জানা যাচ্ছে যে আগামী ২রা সেপ্টেম্বর সকাল ১১টা ৫০ মিনিটে অন্ধপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে উৎক্ষেপণ করা হবে। এরকম সৌর অভিযানে এখনো পর্যন্ত আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জার্মানী সফলতা অর্জন করেছে।

এস সোমনাথ আরো জানিয়েছেন, সূর্যের বায়ুমণ্ডল সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতে আদিত্য-এল-১ উপগ্রহটিকে মহাকাশে পাঠানো হবে। প্রায় ১৫ লক্ষ কিলোমিটার ভ্রমণ করে গন্তব্যে পৌঁছবে সেটি। সময় লাগবে প্রায় ১২০ দিন। আদিত্য-এল-১ হতে চলেছে ভারত থেকে সূর্যের দিকে পাঠানো প্রথম মহাকাশযান। ইসরো জানিয়েছে, মহাকাশযানটিকে সূর্য-পৃথিবীর মধ্যে একটি হ্যালো কক্ষপথের এল-১ পয়েন্টে স্থাপন করা হবে।

সূর্যের অপর নাম আদিত্য। তাই কৃত্রিম উপগ্রহটির এই নাম রাখা হয়েছে। উপগ্রহটিকে মহাকাশে বহন করে নিয়ে যাবে ভারতীয় রকেট পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল অর্থাৎ PSLVআদিত্য-এল-১ অভিযানের জন্য বরাদ্দ প্রায় ৩৭৮.৫৩ কোটি টাকা। এই অভিযান সফল হলে সৌরঝড়ের পূর্বাভাস দিতে সক্ষম হবে ইসরো। পাশাপাশি সূর্যের আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাবও বুঝতে সাহায্য করবে এই উপগ্রহ।

আদিত্য-এল-১-এর পাশাপাশি আরও এক স্বপ্নের মহাকাশ অভিযান নিয়ে ইসরোর অন্দরে ব্যস্ততা তুঙ্গে। ইসরোর ইতিহাসে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই মহাকাশ অভিযানের নাম গগনযানগগনযান-ই হতে চলেছে মহাকাশের গভীরে ভারতের প্রথম মানব অভিযান। ২০২৪ সালে মহাকাশে পাড়ি দিতে চলেছে ভারতের এই মহাকাশযান।

মানববাহী মহাকাশযান পাঠানোর আগে পরীক্ষার জন্য দুটি মানবহীন যানও মহাকাশে পাঠাবে ইসরো। মূল অভিযানের আগে মানবহীন যান পাঠানোর দুটি উদ্দেশ্য- সুরক্ষা এবং নির্ভরযোগ্যতা পরীক্ষা করে দেখা৷ গগনযান ভারতের নিজস্ব অভিযান। পুরো বিষয়টিই ইসরো নিজে পরিচালনা করবে। গগনযানকে সফল করতে বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থাও হাত মিলিয়েছে ইসরোর সঙ্গে। ভারতীয় সেনা, মৌসম ভবন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রক, নৌবাহিনী, উপকূলরক্ষী বাহিনীও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।

গগনযানের বাজেট ৯,০২৩ কোটি টাকা। যদি অভিযান সফল হয়, তা হলে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং শিল্পে ভারতের অগ্রগতি কেউ ঠেকাতে পারবে না বলেই মনে করছেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা।

পাশাপাশি, ২০২৪ সালে আমেরিকার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে রাডার নিসার অর্থৎ নাসা-ইসরো অ্যাপারচার র‌্যাডার পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত। পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রের পরিবর্তনগুলি বোঝার জন্য পৃথিবীর কক্ষপথে এই রাডারটিকে পাঠানো হবে। অভিযানে মোট খরচ হবে প্রায় ১২,২৯৬ কোটি টাকা।

এছাড়া ২০২৪ সালে মঙ্গলগ্রহে মহাকাশযান পাঠানোর প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছে ইসরো। এই অভিযানের নাম মঙ্গলযান-২। তবে এই অভিযানে কত খরচ হচ্ছে তা নিয়ে এখনও কোনও তথ্য অবশ্য প্রকাশ্যে আসেনি।

প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে ইসরোর শুক্রযান-১-এর প্রস্তুতি। শুক্রগ্রহে মহাকাশযান পাঠিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চালাতেই এই অভিযানের পরিকল্পনা করছে ইসরো। এতে খরচ হবে ৫০০ থেকে ১০০০ কোটি টাকা।

শনিবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৩

চিনের ঘরোয়া পণ্য কম বিক্রি হওয়ায় বাড়ছে ভারতের অর্থিক সংকট

মূল্যবৃদ্ধি শুধু একটি পরিবার নয়, একটি দেশ এমনকি গোটা বিশ্বকে অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে ফেলতে পারে। মূল্যবৃদ্ধি হল আসলে মুদ্রাস্ফীতি। আর এই মুদ্রাস্ফীতি-ই অর্থনৈতিক সংকটের মূল কারণ। কিন্তু চিনে এর বিপরীত সমস্যা দেখা দিয়েছে। চিনে মুদ্রাস্ফীতি এর বদলে মুদ্রাসংকোচন দেখা দিয়েছে। ফলে চিনা মুদ্রা ইউয়ানের দাম ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। ইউয়ানের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চিনে জিনিসপত্রের দাম ক্রমশ কমছে। বাজারে জিনিসের জোগান রয়েছে, কিন্তু চাহিদা নেই। চিনা জনগণ হয়ে উঠেছে সঞ্চয়ী।

বিশ্বের সামগ্রিক অর্থনৈতিক সঙ্কটের সাপেক্ষে চিনের এই সঙ্কট কিছুটা বিপরীতধর্মী। সাধারণত, ডলারের সাপেক্ষে মুদ্রার দাম কমে যাওয়ায় বিভিন্ন দেশে মুদ্রাস্ফীতি ঘটে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বৃদ্ধি পায়। চিনে ঠিক তার উল্টো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে বিপরীতধর্মী হলেও চিনের এই মুদ্রাসঙ্কোচন বিশ্ব অর্থনীতিতে মোটেই ইতিবাচক নয়। এই পরিস্থিতি অবিলম্বে সামাল দেওয়া না গেলে অর্থনীতি ভেঙে পড়তে পারে। আর তার প্রভাব পড়বে সমগ্র বিশ্বে।

চিনের অর্থনীতি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদেরাও। কারণ, চিন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি, ঠিক আমেরিকার পরেই। চলতি বছরে সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির অন্তত ৩৫ শতাংশ আসার কথা রয়েছে চিন থেকে। অবশ্য  চিনা সরকারের উপর বিপুল ঋণের বোঝা রয়েছে। তাদের সম্মিলিত মোট ঋণের পরিমাণ ১৩ লক্ষ কোটি ডলার। যা অর্থনীতির উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে।

চিনের শুধুমাত্র ব্যাঙ্কিং সেক্টরের ঋণের পরিমাণ তিন লক্ষ কোটি ডলার। যা ব্রিটেনের সমগ্র অর্থনীতির সমপরিমাণ। এই পরিস্থিতি ভারত বা বহির্বিশ্বের জন্য কতটা সমস্যার, তা এখনও অনেকে পরিমাপ করে উঠতে পারছেন না। চিনের অর্থনীতির গতি শ্লথ হয়ে পড়েছে। মুদ্রাসঙ্কোচন-এর ফলে চিন অধিক উৎপাদন করছে, কিন্তু ঘরোয়া বাজারে বিক্রি হচ্ছে না তাদের পণ্য। ফলে বাইরের দেশে নিজস্ব পণ্য বিক্রিতে জোর দিচ্ছে বেজিং।

অর্থাৎ, সামগ্রিক ভাবে চিনের রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু কমেছে আমদানির পরিমাণ। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেনেও এই ছবি ধরা পড়েছে। ভারতে তারা বেশি পরিমাণ পণ্য পাঠাচ্ছে। কিন্তু ভারতের পণ্য কেনা তারা কমিয়ে দিয়েছে।পরিসংখ্যান বলছে, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে অগস্টে ভারতের মোট রফতানির ৬.৫ শতাংশ গিয়েছিল চিনে। কিন্তু ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে অগস্টে সেই হার কমে হয়েছে ৩.৫ শতাংশ।

এক দিক থেকে এই পরিসংখ্যান ভারতের জন্য চিন্তার। কারণ, চিনে ভারতীয় পণ্যের রফতানি কমে গেলে এ দেশের বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার কিছুটা হলেও ধাক্কা খাবে। চিন থেকে প্রতি বছর যে আয় হয়, তার পরিমাণ কমবে। অন্য দিকে, চিনে রফতানি কমে গেলে চিনা দ্রব্যের আমদানি ভারতে বৃদ্ধি পাবে। সে ক্ষেত্রে, চিনের পণ্যে ছেয়ে যাবে ভারতের বাজার। দেশীয় পণ্য মার খাবে। দেশের ব্যবসায়ীদের জন্য যা খুব একটা স্বস্তির কথা নয়।

কোভিড অতিমারির ধাক্কা এখনও সামলে উঠতে পারেনি চিন। তার ফলে দেশটির অর্থনীতির উপর এমন বিপরীত প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। চিনের অর্থনীতির একটা বড় অংশ নির্ভর করে নির্মাণশিল্পের উপর। সম্প্রতি দেশের অন্যতম নামী নির্মাণসংস্থা দেনার দায়ে ডুবেছে। যার ফলে টান পড়েছে ব্যাঙ্কের ভাঁড়াতেও। কারণ নির্মাণশিল্পে চিনা ব্যাঙ্কগুলির বিনিয়োগের পরিমাণ অনেক বেশি।

চিনের সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক খুব একটা বন্ধুত্বপূর্ণ নয়। দুই দেশের সীমান্ত প্রায়ই সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। কিন্তু সেই উত্তাপের আঁচ কখনও বাণিজ্যে এসে লাগে না। চিনের অর্থনৈতিক সঙ্কট তাই অনায়াসেই ভারতের বাণিজ্যের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে

বুধবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৩

ব্রিটিশদের ভারত থেকে চুরি করা ইন্দ্রমন্দিরের বেগনি নীলা

ইন্দ্রমন্দিরের দুর্ভাগ্যরত্ন

কর্মফল, বহু যুগ ধরে কমবেশী সব ধর্মের মানুষ কর্মফলে বিশ্বাস করে আসছে। আর এই কর্মফলের জন্যই কারো জীবনে নেমে এসেছে দুর্ভাগ্য আবর কারো জীবনে খুলে গেছে সৌভাগ্যের দরজা। ভারতে যখন ব্রিটিশ রাজত্ব শুরু হয় তখন থেকেই তারা এদেশের ধনসম্পত্তি, বহু মূল্যবান পাথর, লুট করতে শুরু করে। এমনকি তারা বিভিন্ন মন্দির থেকেও মহামূল্যবান পাথর চুরি করে। এদের মধ্যে অন্যতম হল ভারতের কানপুরের একটি ইন্দ্রমন্দির থেকে চুরি করা একটি নীলা।

গাঢ় বেগুনী রঙের জ্বলজ্বলে আকারে মাঝারি ধরনের ভারতীয় এই পাথরটির গুণ অনেক। এই পাথরের গায়ে লেগে রয়েছে অনেক হতাশা আর মৃত্যুর গ্লানি। এই বেগনি নীলাটি দিল্লির নীলা নামে পরিচিত। তবে এর উৎপত্তি কানপুরে। শোনা যায়, কানপুরের একটি ইন্দ্রমন্দির থেকে নীলাটি চুরি গিয়েছিল আজ থেকে প্রায় ১৬৬ বছর আগে। ১৮৫৭ সালে ভারতের একাংশ তখন সিপাহি বিদ্রোহে উত্তাল। ব্রিটিশ সরকার যে বিদ্রোহে প্রথম খানিকটা টলে গিয়েছিল। সেই উত্তাল রাজনৈতিক এবং সামাজিক আবহে এই বেগনি রঙের নীলাটি চুরি যায়।

ব্রিটিশ বাহিনীর ঘোড়সওয়ার সৈনিক ছিলেন ডব্লিউ ফেরিস। ১৮৫৭ সালে কানপুরের ইন্দ্রমন্দির থেকে তিনি বেগুনি নীলাটি চুরি করেছিলেন বলে শোনা যায়। মূল্যবান পাথরটি নিয়ে ইংল্যান্ডে ফিরে গিয়েছিলেন ফেরিস। তার পরেই শুরু হয় নীলার লীলাখেলা। পাথরটি চুরি করার পর থেকে নাকি এক দণ্ডও শান্তি পাননি ফেরিস।

অর্থনৈতিক দিক থেকে ফেরিস এবং তাঁর পরিবারের উপর নেমে আসে চরম দুর্ভাগ্যের ছায়া। একের পর এক অর্থনৈতিক ক্ষতি তাঁদের কার্যত পথে বসিয়ে দিয়েছিল। ফেরিসের পরিবারের অনেকে অসুস্থও হয়ে পড়েছিলেন এই সময়। আপনজনদের হারাতে হয়েছিল ওই ব্রিটিশ সৈনিকদের।অথচ তাঁর বাড়ির এক কোণে চুপিসাড়ে পড়ে ছিল এই নীলাটি।

প্রথমে এই খারাপ সময়কে ভাগ্যের ফের বলেই মনে করেছিলেন ফেরিস। হঠাৎই তাঁর নজরে পড়ে ভারত থেকে আনা ওই পাথরটির উপর। তাঁর মনে হয়, ওই পাথর আনার পর থেকেই তাঁর দুর্ভাগ্যের সূত্রপাত। বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখার জন্য এক কাছের বন্ধুকে নীলাটি কিছু দিনের জন্য ধার দেন ফেরিস। পাথরটি পাওয়ার পর পরই নাকি অজ্ঞাত কারণে আত্মহত্যা করেছিলেন সেই ব্যক্তি।

ভারত থেকে আনা এই বেগনি নীলার ক্ষমতা সম্পর্কে ফেরিসের আর তখন কোনও সন্দেহ ছিল না। তিনি অবিলম্বে পাথরটি নিজের কাছ থেকে সরিয়ে ফেলেন। তবে এই পাথরের গল্প এখানেই শেষ নয়। ১৮৯০ সাল নাগাদ নীলাটি ব্রিটিশ লেখক তথা বিজ্ঞানী এডওয়ার্ড হেরন-অ্যালেনের কাছে যায়। নীলার অভিশাপে দুর্ভাগ্য নেমে আসে তাঁর জীবনেও।

হেরন জানান, নীলাটি হাতে পাওয়ার পর থেকে তাঁর সঙ্গে ধারাবাহিক ভাবে খারাপ ঘটনা ঘটে চলেছে। কিছুতেই তিনি ভাগ্য অনুকূলে ফেরাতে পারছিলেন না। এক্ষেত্রেও হেরন পরীক্ষা করার জন্য এক বন্ধুকে নীলাটি দিয়েছিলেন। দেখা যায়, তাঁর সঙ্গেও একের পর এক খারাপ ঘটনা ঘটে চলেছিল। বন্ধুটি আবার হেরনের কাছে পাথরটি ফিরিয়ে দিয়ে যান। সাময়িক বিরতির পর আবার হেরনের জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ।

শেষে অতিষ্ঠ হয়ে হেরন নীলাটি খালের জলে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলেন। কিন্তু কয়েক মাস পর সেখান থেকে বেগনি রঙের পাথরটি তুলে স্থানীয় স্বর্ণকারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি নীলার আংটি ফের ফিরিয়ে দেন হেরনের ঘরে। আবার কিছু দিন নিজের কাছে নীলাটি রাখার পর হেরন অন্য এক বন্ধুর অনুরোধে সেটি তাঁকে দিয়ে দেন। সেই বন্ধু ছিলেন সঙ্গীতশিল্পী। নীলাটি দেহে ধারণ করার পর থেকে তিনি আর কখনও গান করেননি।

নীলাটিকে নিয়ে এবার তন্ত্রমন্ত্রের আশ্রয় নেন হেরন। পর পর সাতটি বাক্সে নীলাটি ভরে তিনি মন্ত্রের মাধ্যমে সেটিকে বন্দি করে রাখেন। তিনি পরিচিতদের নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, তাঁর মৃত্যুর পরেও যেন বাক্স খোলা না হয়। কিন্তু হেরনের মৃত্যুর পরেই বাক্স-সহ পাথরটি তাঁর কন্যা ব্রিটেনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামে জমা দিয়ে এসেছিলেন। ১৯৪৪ সাল থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত মিউজিয়ামে থাকার পর বাক্সটি খোলা হয়।

হেরন বাক্সে একটি চিরকুট রেখে গিয়েছিলেন। তাতে তাঁর পরামর্শ ছিল, পাথরটি সমুদ্রে ছুড়ে ফেলে দেওয়া উচিত। তবে তা করা হয়নি। কানপুরের ইন্দ্রমন্দিরের সেই বেগনি নীলা বর্তমানে ব্রিটেনের মিউজিয়ামে শোভা পাচ্ছে। আর বর্তমানে ব্রিটেনের যা আর্থিক পরিস্থিতি তাতে বলা যেতেই পারে যে এই পাথর সমগ্র ব্রিটেনের আর্থিক সংকটের জন্য দায়ী। এখন এটাই দেখার বিষয় যে ব্রিটেন এই নীলাকে তার মূল স্থানে ফিরিয়ে দেয় কিনা?