মঙ্গলবার, ১০ জানুয়ারী, ২০২৩

এমন কাজ করা জাপানে অপরাধ কিন্তু ভারতে নয়

আজ
আমরা জাপানের এমন কিছু আইনের কথা জানব যা ভারতে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় না
কিন্তু জাপানের আইন ব্যবস্থায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ধরা হয়।



১) বর্ষার
সময় রাস্তায় জল জমা হলে আমরা সাধারণত দু
দিকে খেয়াল করে তার পর রাস্তা পার হই। কিন্তু
হঠাৎ কোনও দিক থেকে দ্রুত গতিতে গাড়ি এলে রাস্তার কাদাজল পথযাত্রীদের গায়ে গিয়ে
পড়ে। এই ঘটনায়  পথযাত্রীরা বিরক্ত হলেও
গাড়ির চালকেরা দিব্যি গাড়ি চালিয়ে নিজেদের গন্তব্যস্থলে চলে যান  বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। কিন্তু জাপানে এই কাজ
করা মানেই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। জাপানে গাড়ির গতি বেশি থাকার কারণে রাস্তার জমা
জলের ছিটে পথযাত্রীর গায়ে লাগলে
, তা
হলে ওই গাড়ির চালককে ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার টাকার কাছাকাছি জরিমানা
দিতে হয়।



২) জাপানের
অধিবাসীরা যখন তখন বাড়ির আবর্জনা নিয়ে বাইরে বেরোতে পারেন না। যদি কেউ মনে করেন
মাঝরাতে বা ভোরের দিকে রাস্তার ধারে আবর্জনা ভর্তি ব্যাগ রেখে দেবেন এবং সকালে
ময়লার গাড়ি এসে সেখান থেকে ব্যাগটি নিয়ে চলে যাবে
তা সম্ভব নয়। সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে
নির্দিষ্ট সময়ে এলাকায় আবর্জনা পরিষ্কার করতে আসেন পুরকর্মীরা
, তখনই সকলকে আবর্জনা নিয়ে
বেরোনোর নির্দেশ দেওয়া রয়েছে। জাপানের রাস্তায় মাঝেমধ্যেই বন্য রেকুন ঘুরে বেড়ায়।
তারা ওই জঞ্জালভর্তি ব্যাগ ছিঁড়ে রাস্তা আরও নোংরা করে ফেলতে পারে। এ ছাড়াও হঠাৎ
করে ওই জঞ্জালের কারণে আগুনও লেগে যেতে পারে। তাই এই নিয়ম।



৩) কোন
অনুষ্ঠানে বা খাবারের আসরে কাউকে জোর করে মদ খাওয়ানোর উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে
জাপানে। এই কাজ  ভারত বা অন্য কোনও দেশে অপরাধযোগ্য
না হলেও জাপানে একে অপরাধ বলেই ধরা হয়।



৪) ওয়াকি টকি ব্যবহারের ক্ষেত্রে জাপানে রয়েছে কড়া
নিয়ম। অন্য দেশ থেকে
ওয়াকি
টকি

কিনে নিয়ে গিয়ে জাপানে ব্যবহার করা যায় না। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদান-প্রদানের জন্য
জাপান তাদের রেডিয়ো নেটওয়ার্কের উপর নির্ভর করে। অন্য দেশের ওয়াকি টকি জাপানে
ব্যবহার করলে সেই নেটওয়ার্কে বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে। কেউ যদি নির্দেশ অমান্য
করেন তা হলে ১ বছরের জেল বা ভারতীয় মুদ্রার হিসাবে ৬ লক্ষ ৩১ হাজার টাকা জরিমানা
হতে পারে।



৫) জাপানে
১৯৪৮ সালে
লাইট ক্রাইমস
অ্যাক্ট
অনুযায়ী, কোনও মহিলা ঊরু এবং পায়ের পিছনের অংশ
জনসমক্ষে কখনও অনাবৃত রাখতে পারেন না। যদি কেউ এই নির্দেশ অমান্য করেন
, তবে তাঁর ২৯ দিন পর্যন্ত জেল হতে পারে। তবে, বর্তমানে এই নিয়ম মেনে কেউ চলেন না। কালের
প্রভাবে সব রকম পোশাকেই জাপানিরা অভ্যস্ত।



৬) ১৯৬০
সাল পর্যন্ত জাপানের রাস্তায় সাদা এবং লাল রঙের গাড়ি চালানো এক প্রকার নিষিদ্ধ
ছিল। রাস্তায় ইমার্জেন্সি কার
, অ্যাম্বুল্যান্স, পুলিশ অথবা দমকলের গাড়ির
ক্ষেত্রে সাদা এবং লাল রং ব্যবহার করা হত। প্রাইভেট গাড়ির থেকে ওই গাড়িগুলিকে
আলাদা করে চিহ্নিতকরণের জন্য এই নিয়ম চালু করা হয়েছিল। অবশ্য এই নিয়ম এখন আর মেনে
চলা হয় না।



৭) ২০০৮
সালের জাপানের মেটাবো আইন অনুযায়ী
, একটি
নির্দিষ্ট বয়সের পর সকলকে তাঁদের কোমরের মাপ পরিমাপ করাতে হয়। বছর চল্লিশের গণ্ডি
পেরোলেই কোমর বছরে অন্তত এক বার পরিমাপ করানো জরুরি।পুরুষদের ক্ষেত্রে কোমরের মাপ
৮৫.০৯ সেন্টিমিটার এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ৮৯.৯২ সেন্টিমিটার থাকা উচিত। যদি কোমরের
পরিমাপ এর থেকে বেশি হয়
, তা হলে
শরীরচর্চা এবং ডায়েটের মাধ্যমে আবার সঠিক মাপে ফিরিয়ে আনা আবশ্যক। সাধারণত ৪০ থেকে
৭৪ বছর পর্যন্ত পরিমাপ করাতে হয়।



৮) প্রতিবেশীর
চিঠি যদি ভুল করে আপনার বাড়িতে চলে আসে
, তবে
নির্দিষ্ট বাড়িতে আমরা তা দিয়ে আসাতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। কিন্তু জাপানে ওই
কাজ অপরাধের সমান।জাপানের আইন অনুযায়ী
, ভুলবশত
প্রতিবেশীর চিঠি পৌঁছে গেলে তা আবার ডাকঘরে দিয়ে আসতে হয়। ডাকঘরের তরফ থেকেই আবার
সেই চিঠি সঠিক ঠিকানায় পাঠানো হবে। প্রেরক এবং প্রাপকের গোপনীয়তা বজায় রাখার জন্য
এই নিয়ম চালু করা হয়েছে।



৯) স্বাস্থ্যগত
সমস্যা বা কাজের কারণে শুধু মাত্র জাপানে দম্পতিরা আলাদা বাড়িতে থাকতে পারেন। এ
ছাড়া কোনও দম্পতির আলাদা ভাবে দীর্ঘ দিন পৃথক জায়গায় থাকার অনুমতি নেই।
জীবনযাত্রার খরচ এবং বিচ্ছেদের সংখ্যা কমাতেই এই নিয়ম চালু করা হয়েছে।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন