কাশ্মীর
ছাড়া ভারত-পাকিস্তান বিবাদ
স্যর
ড্যানিয়েল র্যাডক্লিফ ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় ভারত ও পাকিস্থানের মধ্যে সীমান্ত
নির্ধারণ করেন। সেই কারণেই বোধহয় এই দুটি দেশের মধ্যে সীমান্ত বিবাদ থেকে
গেছে। বিভিন্ন সময়ে তা নিয়ে যুদ্ধও হয়েছে।
তবে মূলত কাশ্মীর কেন্দ্রিক সীমান্ত বিবাদের কথাই আন্তর্জাতিক মহলে বহুল প্রচলিত
হলেও আরও একটি সীমান্ত বিবাদ রয়েছে এই দুটি দেশের মধ্যে। আর সেটি হল 'স্যর ক্রিক'।
নিয়ন্ত্রণরেখা
অর্থাৎ LOC যেমন
কাশ্মীর থেকে পাক অধিকৃত কাশ্মীরকে আলাদা করে রেখেছে, সেই রকমই দক্ষিণ-পশ্চিমে
ভারতের গুজরাত এবং পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশকে আলাদা করে রেখেছে ‘স্যর ক্রিক’। এই ‘স্যর ক্রিক’ নিয়ে বিবাদ রয়েছে এই দুটি
দেশের মধ্যে।বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দুই দেশের আলোচনা কাশ্মীর এবং সিয়াচেনেই সীমাবদ্ধ
থাকে। এর ফলে ‘স্যর
ক্রিকে’
সীমান্ত সমস্যাকে কোনও দেশই বিশেষ গুরুত্ব দিতে চায় না।
যদিও
স্বাধীনতার অনেক আগে থেকেই এই অংশ নিয়ে বিতর্ক চলে আসছে।১৯০৮ সালে সিন্ধু প্রদেশের
রাজা এবং কচ্ছের রাও মহারাজের মধ্যে প্রথম বার এই সীমান্ত নিয়ে কথোপকথন হয়।
স্বাধীনতার পূর্বে এই পুরো এলাকা ব্রিটিশ রাজের বম্বে প্রেসিডেন্সির মধ্যে পড়ত।
তখন বম্বে সরকার একটি সমীক্ষা করে তখনকার মতো এই বিতর্কের ইতি টানে। পরবর্তী ৪০-৫০
বছর বিতর্কটি চাপা পড়েই ছিল।
১৯৬৫-র
যুদ্ধের পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হ্যারল্ড উইলসনের পরামর্শে আন্তর্জাতিক
ট্রাইবুনালের শরণাপন্ন হয় দুই দেশ। ১৯৬৮-তে ট্রাইবুনাল তাদের রায়ে জানায়, রণের ৯০ শতাংশ ভারতের মধ্যে
পড়ে এবং ১০ শতাংশ পাকিস্তানের মধ্যে পড়ে। এরপর পাকিস্তান দাবি করে, স্যর ক্রিক সিন্ধ প্রদেশের
মধ্যে অবস্থিত। এই দাবির ফলে ট্রাইবুনালের দ্বারা নির্ধারিত সীমা ক্রিকের আরও
পশ্চিমে সরে যায়। ১৯১৪ সালে সিন্ধ প্রদেশ এবং রাও মহারাজের মধ্যে হওয়া চুক্তির
ভিত্তিতে পাকিস্তান এই দাবি করতে থাকে। ১৯২৫ সালে আন্তর্জাতিক সীমার থালউইগ
প্রিন্সিপালের উপর ভিত্তি করে একটি মানচিত্র প্রকাশিত হয়। এই মানচিত্রের উপর
ভিত্তি করে স্যর ক্রিকের মাঝামাঝি খুঁটিও বসানো হয়। পাকিস্তান এই মানচিত্রকে
স্বীকৃতি দেয় না।সময় যত অতিক্রান্ত হয়েছে গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে স্যর ক্রিকের।
পরিবর্তিত গতিপথ অনুযায়ী যদি সীমা নির্ধারণ করা হয় তবে দুই দেশকেই নিজের অংশের বেশ
কিছু জমি খোয়াতে হতে পারে।
এখন
প্রশ্ন এসে যায় ‘স্যর
ক্রিক’
এর গুরুত্ব নিয়ে- কৌশলগত এবং সামরিক দিক থেকে এর এত গুরুত্ব না থাকলেও এই জলপ্রবাহে
প্রচুর মাছের সম্ভার রয়েছে। এই অঞ্চলকে এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ মৎস্যভান্ডার বলে মনে করা
হয়। দুই দেশের মৎস্যজীবীরা এখানে মাছ ধরতে এসে প্রায়শই সীমা লঙ্ঘন করে ফেলেন। এর
ফলে দু-দেশেই অনেকে বন্দি হয়ে যান। এই নিয়ে দ্বন্দ্ব থেকেই যায়। এ ছাড়াও মনে করা
হয় এই অঞ্চলের মাটির নীচে বিপুল পরিমাণে গ্যাস এবং হাইড্রোকার্বন রয়েছে। যে দেশই
এর পুরো দখল নিতে পারবে তাদেরই জ্বালানির চাহিদা মেটানোর ক্ষমতা থাকবে।
এই
ক্রিক সীমান্তে পাহারার দায়িত্বে রয়েছে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর বিশেষ বিভাগ ‘ক্রিক ক্রোকোডাইল কমান্ডো’। ২০০৯ সালে এই শাখা প্রতিষ্ঠিত
হয়। সিন্ধু নদের ব-দ্বীপ এবং ক্রিক অঞ্চলের নিরাপত্তা রক্ষায় এরা বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন