সম্প্রতি গুজরাত বন বিভাগের একটি দল দেবগড়
বরিয়ার গভীর জঙ্গলে ট্রেকিং করতে গিয়েছিল। সেই দলেরই এক জন জঙ্গলের মধ্যে থাকা
একটি গুহার পাথরে হোঁচট খেয়ে পড়ে যান। উঠে দাঁড়েতে গিয়ে ঐ বনকর্মী দেখতে পান
পাথরটির গায়ে কিছু দক্ষ হাতের আঁকিবুঁকি রয়েছে। আরও ভাল করে দেখতেই আবিষ্কৃত হয়
পাঁচ হাজার বছরের পুরনো সভ্যতার গুহাচিত্র।বিষয়টি আরও খতিয়ে দেখতে ধীরে ধীরে গুহার
ভিতরে প্রবেশ করেন বনকর্মীরা। গুহার মেঝেতেও ওই ধরনের বেশ কয়েকটি ছবি তাঁদের চোখে
পড়ে।কিন্তু ধীরে ধীরে গুহার আরও ভিতরে ঢুকতেই ওই বনকর্মীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
তাঁরা দেখেন, ওই
অমূল্য প্রত্নতাত্ত্বিক গুহাচিত্রগুলিকে পাহারা দিচ্ছে একটি শ্লথ ভালুক। গুহার
ভিতরের একটি প্রকোষ্ঠে ওই ভালুকটি ছিল বলে বনকর্মীরা নিশ্চিত করেছেন। যদিও দেবগড়
বরিয়ার জঙ্গল শ্লথ ভালুকের জন্য বিখ্যাত।
ওই গুহা থেকে ফিরে আসার সময় বেশ কয়েকটি ছবি
সম্বলিত পাথর সঙ্গে করে নিয়ে ফেরেন বনকর্মীরা। সেই পাথরের টুকরোগুলি পরীক্ষা করে
দেখা যায়, ওই
অঞ্চলে মধ্যপ্রস্তর যুগে মানুষের বসবাস ছিল। গড়ে উঠেছিল এক সভ্যতা। আর সেই
সভ্যতার মানুষেরাই এই গুহাচিত্রগুলি এঁকেছিলেন।ওখানে এককালে বসবাসকারী মানুষেরা
গুহার দেওয়ালে এবং পাথরে যে ছবিগুলি এঁকেছিলেন, তার
বেশ কয়েকটি এখনও অক্ষত রয়েছে বলে প্রত্নতাত্ত্বিকেরা জানিয়েছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, গুহাতে গ্রানাইট পাথরের উপর
ছবিগুলি এমন ভাবে আঁকা হয়েছিল, যাতে
সেগুলি বৃষ্টি, বাতাস
এবং প্রখর রোদেও নষ্ট না হয়।
বনকর্মীরা জানিয়েছেন, জঙ্গলের আরও বেশ কিছু
পাহাড়ের গায়ে এই ধরনের ছবি রয়েছে, যেগুলি
আংশিক ভাবে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এই ছবিগুলি মূলত দেবগড় বারিয়া ও সাগতলার মাঝখানের
ভ্যাভরিয়া ডুঙ্গার পাহাড়ে রয়েছে।এই গুহাচিত্রগুলির বেশ কয়েকটিকে ক্যামেরাবন্দি
করেছিলেন সহকারী বন সংরক্ষক প্রশান্ত তোমর। তাঁর কথায়, ‘‘কোথাও
এই চিত্রগুলি অক্ষত রয়ে গিয়েছে। আবার কোথাও আংশিক ভাবে মুছে গিয়েছে। গুহাটি একটি
সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অবস্থিত। সেখানে মানুষের আনাগোনা কম। তার উপরে একটি শ্লথ ভালুক
এই গুহা পাহারা দেয়। আর সেই কারণেই পাহাড়ের উপরের ছবি নষ্ট হলেও গুহার ভিতরের ছবি
অক্ষত রয়েছে।’’
গুজরাতের এমএস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন
অধ্যাপক এবং গুহাচিত্র বিশেষজ্ঞ, ভিএইচ
সোনাওয়ানে ১৯৭১ সালে পঞ্চমহল জেলার তরসাঙে গুজরাতের প্রথম গুহাচিত্র আবিষ্কার
করেছিলেন। সেই গুহাচিত্রগুলি ১৩ বা ১৪ শতকের বলে মনে করা হয়। তাঁর মতে সম্প্রতি
পাওয়া ‘‘পাহাড়ের
পাথরে আঁকা চিত্রগুলি দেখে মনে হচ্ছে, সেগুলি
আলাদা আলাদা সময়ের। একটি ষাঁড় এবং কয়েকটি মানবচিত্র সম্ভবত মধ্যপ্রস্তর যুগের।’’সোনাওয়ানের মতে, দেবগড় বরিয়ায় খুঁজে পাওয়া
গুহাচিত্রগুলি গ্রানাইট পাথরের উপর লাল হেমাটাইট শিলা দিয়ে আঁকা হয়েছে। এই ধরনের
শিলা পাথুরে মাটিতে পাওয়া যায়।এই গুহাচিত্রগুলিকে সরকারের রক্ষা করা উচিত। এগুলি
বড় আবিষ্কার। এই ছবি থেকে এ-ও ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, মধ্যপ্রস্তর যুগে মানুষ এখানে
বসবাস করতেন। আরও গবেষণা করলে হয়তো নতুন নতুন তথ্য উঠে আসতে পারে।’’
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন