পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে দক্ষিণ আমেরিকা
মহাদেশের পশ্চিম উপকূল ঘেঁষে পেরু, ইকুয়েডর
বরাবর কোন কোন বছর ডিসেম্বর মাস নাগাদ এক প্রকার উষ্ণ দক্ষিণমুখী স্রোতের সৃষ্টি
হয়। এরই নাম এল নিনো।এল নিনো একটি স্প্যানিশ শব্দ। এর অর্থ ছোট্ট ছেলে। পেরু, ইকুয়েডর উপকূলেই মাঝে মাঝে এল
নিনোর বিপরীত একটি শীতল স্রোতও সৃষ্টি হয়। তার নাম লা নিনা। দুই স্রোতেরই প্রভাব
পড়ে বিশ্বের আবহাওয়ায়।
এল নিনোর প্রভাবে পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে
উত্তরমুখী শীতল পেরু স্রোত বাধাপ্রাপ্ত হয়। এর ফলে সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র সাময়িক
ভাবে নষ্ট হয়ে যায়। ওই অঞ্চলে মৎস্যচাষের ব্যাঘাত ঘটে। সামুদ্রিক প্রাণী এবং
পাখিদের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে এই স্রোতের প্রভাবে।দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম
উপকূলে এল নিনো নিম্নচাপের সৃষ্টি করে। যার ফলে ওই এলাকায় অসময়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত
হয়। তবে এই উষ্ণ স্রোতের প্রভাব কেবল পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরেই সীমাবদ্ধ থাকে না।
নিরক্ষরেখা বরাবর প্রশান্ত মহাসাগরের জল এল
নিনোর প্রভাবে ধারাবাহিক ভাবে উষ্ণ হতে শুরু করে। এর ফলে কোথাও অতিবৃষ্টিতে বন্যা, কোথাও অনাবৃষ্টিতে খরার
পরিস্থিতি তৈরি হয়।আমেরিকার ন্যাশনাল ওশানিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফেরিক
অ্যাডমিনস্ট্রেশন (এনওএএ) সম্প্রতি ঘোষণা করেছে, প্রশান্ত
মহাসাগরে এল নিনোর দেখা মিলেছে। ২০০০ সাল থেকে এই নিয়ে পঞ্চম বার উষ্ণ স্রোতটির
আবির্ভাব হল।
ভারতে গত ১০০ বছরে ১৮ বার খরা হয়েছে। এই ১৮টি
খরার মধ্যে ১৩টির নেপথ্যেই রয়েছে এল নিনোর হাত। প্রশান্ত মহাসাগরের উষ্ণ জল অতীতে
ভারতে খরা ডেকে এনেছে বার বার।পরিসংখ্যান বলছে, ১৯০০
থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত প্রশান্ত মহাসাগরে সাত বার এল নিনোর সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু
১৯৫১ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে এল নিনোর দেখা মিলেছে অন্তত ১৫ বার।এল নিনোর এই ১৫টি
বছরের মধ্যে ৯ বার ভারতে বর্ষাকালে পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টি হয়নি। স্বাভাবিকের
তুলনায় অনেকটাই কম বৃষ্টি হয়েছে এই বছরগুলিতে।
পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ার কারণে ভারতের কৃষি
ব্যবস্থা প্রভূত ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ঠিক সময়ে সংশ্লিষ্ট ফসল উৎপাদিত হয় না।
চাহিদা অনুযায়ী জোগান না থাকায় মূল্যবৃদ্ধিও হয়ে পড়ে অবধারিত। অতীতে এল নিনোর
বছরগুলিতে এ ভাবেই ভুগতে হয়েছে ভারতকে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সাত বছর পর এল নিনো ফিরেছে।
তার ফলে ভারতের আবহাওয়ায় এই উষ্ণ স্রোত কতটা প্রভাব থাকবে, কতটাই বা এদেশে বৃষ্টির ঘাটতি
দেখা দেবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না?বিশেষজ্ঞরা
এই বিষয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন। তবে আরও কিছু
দিন পর ভারতের উপর এবছরের এল নিনোর প্রভাব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন