সোমবার, ১৯ জুন, ২০২৩

শৈশবে ইংরাজী পড়ার বইতে থাকা এই ছড়াগুলির অন্ধকার সত্য

আমাদের শৈশবে বাংলা পড়ার বইতে যেমন ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং সুকুমার রায়ের কবিতা ঠিক তেমনই ইংরেজিতে ছিল বিভিন্ন ছড়া। হাম্পটি ডাম্পটি থেকে জ্যাক অ্যান্ড জিল’—এই চরিত্রগুলির সঙ্গে পরিচয়ের মাধ্যমেই আমরা সকলেই বড় হয়ে ওঠেছি বা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বড় হয়ে উঠছে। শৈশবের ইংরাজি বইতে থাকা এই ছড়াগুলি শুনে নির্মল আনন্দ পাওয়া গেলেও আসলে তার বেশির ভাগেরই নেপথ্যে রয়েছে অন্ধকার সত্য। ছোটদের এই ছড়াগুলির মাধ্যমে কখনও ফুটে ওঠে মহামারির চিত্র, কখনও ফুটে উঠেছে আত্মহত্যার কাহিনি, আবার কখনওবা তুলে ধরা হয়েছে কর আদায়ের ব্যবস্থাও।

হাম্পটি ডাম্পটির নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে একটি আস্ত ডিমের ছবি। মানুষের মতোই যার হাত-পা, চোখ, কান, নাক, মুখ রয়েছে। কিন্তু এতো গেল কল্পনার জগৎ। বাস্তবটা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। অনেকের মতে, হাম্পটি ডাম্পটি আসলে একটি বিশালাকার কামান। ছড়ায় ডিমের চেহারাকে প্রতীকী হিসাবে দেখানো হয়েছে। আমেরিকার গৃহযুদ্ধ চলাকালীন সেন্ট মেরি অ্যাট দ্য ওয়ালস চার্চ টাওয়ারের উপরে বিশাল আকৃতির এই কামান রাখা ছিল। তার কথাই হাম্পটি ডাম্পটি ছড়ায় ধরা পড়েছে।

ছোটদের প্রিয় ছড়ার মধ্যে অন্যতম জ্যাক অ্যান্ড জিল ওয়েন্ট আপ দ্য হিল। একাংশের মতে, জ্যাক এবং জিল আসলে সত্য ঘটনার প্রতিচ্ছবি। ফ্রান্সের ষোড়শ লুই এবং তাঁর স্ত্রী মেরি অ্যান্টোইনেট দুজনে প্রতারণার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়। শাস্তি হিসাবে মুণ্ডচ্ছেদ করা হয় দুজনের। ছড়ায় জ্যাক এবং জিলের নাম ব্যবহার করে আদতে ষোড়শ লুই এবং তাঁর স্ত্রীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

বা বা ব্ল্যাক শিপ ছড়ায় তিন ব্যাগভর্তি উলের কথা উল্লেখ রয়েছে। ছড়া অনুযায়ী তার মধ্যে এক ব্যাগ উল প্রভুর জন্য, দ্বিতীয় ব্যাগটি গৃহিণীর জন্য। গলির শেষে যে ছোট ছেলেটি থাকে তার জন্য বরাদ্দ ছিল উলভর্তি তৃতীয় ব্যাগটি।আসলে ছড়ায় ১৩ শতকের পশম সংক্রান্ত করব্যবস্থার কথা উল্লেখ রয়েছে। করের নিয়ম অনুযায়ী, উলের মূল্য তিন ভাগে ভাগ হত। এক তৃতীয়াংশ রাজার জন্য বরাদ্দ ছিল। বাকি দুই ভাগের এক ভাগ যেত গির্জায় এবং অবশিষ্টাংশ যেত কৃষকের কাছে। আবার অনেকে মনে করেন বা বা ব্ল্যাক শিপ ছড়ায় বর্ণবৈষম্যের ধারণার কথা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। মাস্টার এবং ব্ল্যাক শব্দের ব্যবহার দ্বারা তৎকালীন সমাজের বর্ণবৈষম্যতার রূপ তুলে ধরা হয়েছে বলে দাবি অনেকের।

ডু ইউ নো দ্য মাফিনম্যান ছড়াটি সুর করে গাইতেই শিশুরা বেশী স্বচ্ছন্দ্য বোধ করে। ড্রুরি লেনের বাসিন্দা মাফিনম্যানকে অনেকেই চেনেন! প্রাচীন গাথা অনুযায়ী মাফিনম্যান আসলে এক জন সিরিয়াল কিলার। লোকমুখে প্রচারিত, ষোড়শ শতকে মাফিনম্যান নাকি বাচ্চাদের মাফিন খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে মেরে ফেলত। অধিকাংশের দাবি, মাফিনম্যান কিছুতেই চাইত না যে তার এলাকায় অন্য কেউ এসে বেকারির জিনিসপত্র বিক্রি করুক। তাই এলাকায় প্রতিযোগীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে ভেবে সাত জনকে খুন করে সে।

রিং অ্যারাউন্ড দ্য রোসেস ছড়াটির সঙ্গেও ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে ভয়াবহতা। একাংশের মতে, ছড়ায় ১৬৬৫ সালে লন্ডনে মহামারির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।মহামারির ফলে রোগীদের ত্বকে র‌্যাশ বেরোতো। তার ফলে তাঁরা অস্বাভাবিক যন্ত্রণার শিকার হতেন। একাংশের মতে রোজ়ি নামের আড়ালে এই যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতির কথা বোঝাতে চেয়েছেন রচয়িতা। র‌্যাশ হলে আক্রান্ত রোগীদের শরীর থেকে দুর্গন্ধ বার হত। তা থেকে রেহাই পেতে এক ধরনের বিশেষ সুগন্ধি ফুল ব্যবহৃত হত। ছড়ায় পোসিস শব্দের মাধ্যমে এই ফুলের কথা বলা হয়েছে বলে মনে করেন অনেকে।

লন্ডন ব্রিজ ইজ় ফলিং ডাউন ছড়া অনুযায়ী বার বার নানা উপায়ে সেতু তৈরি করা হলেও তা ভেঙে পড়ত। সেতু তৈরির সময় তার ভিতর কোনও মৃতদেহ পুঁতে না রাখলে তা ভেঙে পড়বে বলে তখন ধারণা ছিল অনেকের। কিন্তু এই ঘটনা আদৌ সত্য কি না, সেতুর ভিতর কোনও দেহ রয়েছে কি না তা জানা যায় নি।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন