শুক্রবার, ২৩ জুন, ২০২৩

এই সিনেমাটি দেখলেই ভূতুড়ে দুনিয়ায় পৌঁছে যাওয়া যায়

আন্তর্জাতিক স্তরে অর্থাৎ হলিউড-এ এমন কয়েকটি ভূতুড়ে সিনেমা রয়েছে, যা দেখার পর, ভয় ঘিরে ধরে দর্শকদের, রাতের ঘুম উড়ে যায় দর্শকদের। কিন্তু ভয় পাওয়া এক রকম, আর ভূতের সিনেমা দেখতে গিয়ে মারা যাওয়া অন্য রকম। সত্তরের দশকে এমন একটি ভূতের চলচিত্র বানানো হয়েছিল যা দেখার পরেই দর্শকদের মৃত্যু হয়েছিল। এমনকি, বহু দুর্ঘটনার সঙ্গে যোগ রয়েছে এই সিনেমার।

সিনেমাটির নাম আনট্রাম। ১৯৭০ সালে এই সিনেমা বানানোর কাজ সম্পূর্ণ শেষ হয়ে যায়। প্রযোজক এবং পরিচালক তখন শুধুমাত্র ছবি মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছেন। সিনেমাটি তৈরির প্রায় এক দশক পরে বিদেশের বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে আনট্রাম ছবিটি পাঠানোর জন্য আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু একটিও চলচ্চিত্র উৎসব সিনেমাটি দেখানোর আবেদন গ্রহণ করেনি। ১৯৮০ সাল পর্যন্ত সকলে আনট্রামকে অন্যান্য ভূতের ছবির মতোই ভেবে এসেছিলেন। কিন্তু আবেদন খারিজ করার পর তাঁদের সকলের মত পরিবর্তন হয়।

যে চলচ্চিত্র উৎসবগুলিতে আনট্রাম ছবিটি দেখানোর জন্য আবেদন জানানো হয়েছিল, সেই উৎসবগুলির সঙ্গে জড়িত একের পর এক উদ্যোক্তা মারা যেতে থাকেন। কিন্তু ঠিক কী কারণে তাঁরা প্রাণ হারিয়েছিলেন, তার সঠিক কারণ কিন্তু জানা যায়নি।

অনেকের দাবি, আনট্রাম ছবিটি দেখানো হয়নি বলেই তাঁদের মৃত্যু হয়েছিল। ওই ছবির মধ্যে এমন কিছু রয়েছে, যার অভিশাপ এসে পড়েছিল উদ্যোক্তাদের উপর। এই ঘটনার পর থেকে ছবিটি নিয়ে আলোচনা বাড়তে থাকে।

বহু বছর দেশ-বিদেশের কোনও সিনেমা হলে মুক্তির অনুমতি পায়নি আনট্রাম। কিন্তু ১৯৮৮ সালে বুদাপেস্টের এক সিনেমা হলে হঠাৎ করে চালু হয়ে যায় ছবিটি। ছবিটি শুরু হওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই প্রেক্ষাগৃহের ভিতর দাউদাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে। আগুনে পুড়ে মারা যান প্রায় ৫৬ জন।অনেকের দাবি, প্রজেক্টরে যান্ত্রিক ত্রুটি থাকার ফলে সিনেমা হলের ভিতর আগুন ধরে যায়। আবার কেউ কেউ দাবি করেছিলেন যে, প্রজেক্টর সঠিক ভাবেই কাজ করছিল। সিনেমা হলের ভিতর বসে থাকা এক দর্শকই নাকি আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন।কিন্তু সকলের মনে একটি ভয় উঁকি মারছিল। তা হল আনট্রাম। সিনেমাটি দেখার ফলেই নাকি এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছিলেন অনেক মানুষ।

তারপর বহু বছর আনট্রাম দেখানো হয়নি আর কোন সিনেমা হলে। মানুষের মনের ভয় খুব সহজে কাটেনি। দুর্ঘটনার প্রায় ৫ বছর পর ক্যালিফোর্নিয়ার একটি সিনেমা হলে দেখানো হয় ছবিটি। কিন্তু ওই সিনেমা হলে দর্শকেরাও দুর্ঘটনার কবল থেকে রক্ষা পাননি।১৯৯৩ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার প্রেক্ষাগৃহে আনট্রাম ছবিটি চালু হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই দর্শকদের মধ্যে তুমুল ঝামেলা এবং হাতাহাতি শুরু হয়। এই ঝামেলায় পদপিষ্ট হয়ে মারা যান প্রায় ৩০ জন।

আবার শুরু হয় আনট্রাম ছবি ঘিরে বিতর্ক। এই ছবি কেউ দেখলেই তাঁর মৃত্যু হবে বলে ধারণা তৈরি হয়ে যায়। যদিও পরে জানা গিয়েছিল যে, প্রেক্ষাগৃহের কর্মী পপকর্নের সঙ্গে মাদক মিশিয়ে দিয়েছিলেন। সেই পপকর্ন খেয়েই সেখানে উপস্থিত দর্শকরা অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করেন। তবে মাদক মেশানোর ঘটনাটি মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন প্রেক্ষাগৃহে উপস্থিত দর্শক। তাঁদের দাবি, আসল ঘটনাটি চাপা দেওয়ার জন্যই এমন খবর রটানো হয়েছে। আসলে, আনট্রাম ছবিটির সঙ্গেই এই ঘটনার যোগ রয়েছে।

রহস্যজনক ভাবে ক্যালিফোর্নিয়ার প্রেক্ষাগৃহ থেকে আনট্রাম ছবির কোনও রিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। তার পর সিনেমাটি আর কোনও দিন কোনও প্রেক্ষাগৃহ বা চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়নি। অনেকেই ভাবতেন যে, এই সিনেমাটি অভিশপ্ত

২০১৮ সালে আবার নতুন ভাবে মুক্তি পায় আনট্রাম। তথ্যচিত্র নির্মাণকারী একটি দলের হাতে ওই ছবির ৩৫ মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের রিল আসে। তা পর্যবেক্ষণ করে দলের সদস্যরা জানিয়েছিলেন যে, ১৯৭০ সালে যে সিনেমাটি তৈরি করা হয়েছিল তাতে বিভিন্ন অদ্ভুত চিহ্ন এবং বিভিন্ন কম্পাঙ্কের শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। যে চিহ্ন চোখের সামনে দেখলে বা যে বিশেষ কম্পনের আওয়াজ শুনলে অলৌকিক জগতের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ তৈরি হয়ে যায়, সেগুলিই ব্যবহার করা হয়েছিল আগের আনট্রাম ছবিতে। তাই ছবিটি দেখার ফলেই নাকি দর্শকের সামনে নরকের দ্বার খুলে যেত। নানা অশুভ ঘটনাও ঘটত তাঁদের সঙ্গে।

আগেকার আনট্রাম ছবির সঙ্গে সাদৃশ্য বজায় রেখে আবার নতুন করে ২০১৮ সালের ১৪ অক্টোবর ছবিটি মুক্তি পায়। ছবিটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন ডেভিড আমিতো এবং মাইকেল লাইকিনি। ব্রুকলিন চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটি প্রথম দেখানো হয়। তবে, নতুন ভাবে মুক্তিপ্রাপ্ত আনট্রাম ছবিটি দেখার পর কোনও দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়নি কোন দর্শকে। শুধুমাত্র ব্রুকলিন চলচ্চিত্র উৎসবেই নয়, এই ছবিটি বহু দর্শক নেটমাধ্যমেও দেখেছিলেন। কিন্তু তাঁরা সকলে বহাল তবিয়তেই রয়েছেন।

অনেকে মনে করেন, পুরনো ছবিটির সঙ্গেই অভিশাপ জড়িয়েছিল। নতুন ছবির সঙ্গে তার কোনও রকম যোগ নেই। যদিও একাংশের দাবি, আনট্রাম ছবিটি নিয়ে মানুষের মনে শুরু থেকেই ভুল ধারণা তৈরি হয়ে রয়েছে। এগুলো কুসংস্কার ছাড়া আর কিছুই নয়।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন