প্রায় ২০০ বছর আগে এই ‘ভূতের’ আবির্ভাব হয়েছিল। আবার এই ভূতকে
কেন্দ্র করে এক অঞ্চলের মানুষ এখন উৎসব পালন করে থাকেন। কিন্তু একটি প্রশ্ন সবার কাছে
এসে পড়ে - কিভাবে সম্ভব ভূত তার খুনিকে ধরিয়ে দিল? অবশ্য
এই পৃথিবীতে সবই সম্ভব, আসুন
সেই ঘটনার কথাই জেনে নিই এবার।
এই গল্প ফ্রেডরিক ফিশারের। ফ্রেডরিক ছিলেন
ইংল্যান্ডের এক ব্যবসায়ী। একটি দোকান ছিল তাঁর। কিভাবে জানা যায় না, তিনি জাল নোট রেখেছিলেন নিজের
দোকানে। ফলে তার লেনদেনে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন ফ্রেডরিক।১৮১৫ সালে তাকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল
ইংল্যান্ডের আদালত থেকে। শোনা যায় সে সময় ইংল্যান্ডের বেশীরভাগ আসামীকেই
অস্ট্রেলিয়ায় পাঠিয়ে দেওয়া হত।ফ্রেডরিককেও তাই করা হয়েছিল।ফ্রেডরিক পড়াশোনা
জানতেন। অস্ট্রেলিয়ায় তিনি গিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার কাজে লেগে পড়েছিলেন।
১৮২২ সালে ফ্রেডরিকের ১৪ বছরের সাজার অর্ধেক
মেয়াদ শেষ হলে, তিনি
জামিনের আবেদন করেন। অস্ট্রেলিয়ায় কিছু জমিজমা কেনার অনুমতিও চান। প্রশাসন তাঁকে
অনুমতি দিয়েছিল। এরপরেই ফ্রেডরিক সিডনির অদূরে ক্যাম্পবেলটাউনে বেশ কিছু জমিজমা
কেনেন। তার মধ্যে চাষের জমিও ছিল। তিনি একটি কাগজের কলও খুলেছিলেন।
আবার ১৮২৫ সালে স্থানীয় এক কাঠের মিস্ত্রির
সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে ফ্রেডরিক। এরপর তাঁকে ফের জেলে পাঠানো হয়। খামার, চাষের জমি নিয়ে তিনি কি করবেন
তা নিয়ে চিন্তায় পড়েন ফ্রেডরিক। প্রতিবেশী জর্জ ওরালের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। তাঁর
জিম্মাতেই নিজের জমিজমা রেখে ফ্রেডরিক জেলে যান। তিনি জর্জকে পাওয়ার অফ অ্যাটর্নিও
দিয়ে যান। সে বার ছ’মাস
জেলে ছিলেন ফ্রেডরিক। জেল থেকে বেরিয়ে জর্জের কাছে নিজের জমি ফেরত চান। জর্জ সেই জমি
ফেরাতে অস্বীকার করেন। দাবি করেন, ওই
জমি তাঁর।
১৮২৬ সালের ১৭ই জুন উধাও হয়ে যান ফ্রেডরিক।
জর্জ স্থানীয়দের জানান, আবার
ইংল্যান্ডে ফিরে গিয়েছেন তিনি। যাওয়ার আগে নিজের সব সম্পত্তি, জমি তাঁর কাছে বিক্রি করে
দিয়ে গিয়েছেন। ফ্রেডরিকের ঘোড়াও তিনি দখল করে নেন।
এই ঘটনার ঠিক চার মাস পর ফ্রেডরিকের এক স্থানীয়
বাসিন্দা জন ফার্লে অদ্ভুত এক দাবি করেন। তিনি জানান, তিনি ফ্রেডরিকে দেখেছেন। একটি
সেতুর রেলিংয়ে বসেছিল ফ্রেডরিক। তিনি এ-ও দাবি করেন, ফ্রেডরিক কোনও কথা বলেনি তাঁর
সঙ্গে। শুধু পিছনে মাঠের দিকে নির্দেশ করে উধাও হয়ে যান। তাঁর মতে তিনি ফ্রেডরিকের
ভূত দেখেছেন, কারণ
তিনি মনে করেছিলেন একজন মানুষ অত তাড়াতাড়ি উধাও হতে পারে না।
প্রথমে জনের দাবি সকলে উড়িয়ে দেয়। কিন্তু
পুলিশের মনে ক্রমে সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করে। সেতুর ধারে ওই মাঠে গিয়ে তল্লাশি
শুরু করে পুলিশ, যে
দিকে নির্দেশ করেছিল ফ্রেডরিকের ‘ভূত’। তল্লাশির পর ওই মাঠ থেকে উদ্ধার
হয় ফ্রেডরিকের দেহাবশেষ। তদন্তে নামে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় জর্জকে। জর্জ স্বীকার
করে নেয় খুনের কথা। আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে। যদিও আদালতে ‘ভূতের’ তত্ত্ব কোনও প্রমাণ হিসাবে
গৃহীত হয়নি।
জর্জের শাস্তির পর একটি প্রশ্ন উঠেছিল। সত্যিই
কি ‘ভূত’ দেখেছিলেন জন ফার্লে। অনেকেই মনে করেন, ‘ভূতের’ গল্প তৈরি করেছিলেন খোদ ফার্লে। সম্ভবত তিনি
ফ্রেডরিককে খুন হতে দেখেছিলেন। কী ভাবে বিষয়টি প্রকাশ করবেন, বুঝতে পারেননি। তাই ‘ভূতের’ গল্প ফেঁদেছিলেন। অন্যদিকে তদন্তকারীদের একাংশের
ধারণা ছিল, খুনের
কোনও সাক্ষী ‘ভূত’ সেজেছিলেন। তিনি হয়তো জর্জের হাতে ফ্রেডরিককে
খুন হতে দেখে ফেলেছিলেন। পুলিশকে সে কথা জানানোর সাহস পাননি। তাই ‘ভূত’ সেজে বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেন।
অবশ্য সিডনির এক সাংবাদিক দাবি করেছিলেন, সেতুর ধারে আদতে কেউ ‘ভূত’ দেখেননি। পুলিশি তদন্ত, বা আদালতে বিচারের নথিতে
তার কোনও উল্লেখই নেই। ওই সেতুর রেলিংয়ে রক্তের দাগ দেখে পুলিশই নাকি তল্লাশি শুরু
করে। তার জেরেই পাশের মাঠ থেকে ফ্রেডরিকের দেহাবশেষ উদ্ধার হয়।
যদিও শেষ পর্যন্ত ফ্রেডরিকের ‘ভূতের’ গল্প স্থানীয়দের মুখে মুখে ঘুরতে থাকে। সেই
নিয়ে বহু জনশ্রুতি তৈরি হয়। সেই ‘ভূত’কে নিয়ে ক্রমে উৎসবে মাতেন ক্যাম্পবেলটাউনের
বাসিন্দারা।প্রতি বছর নভেম্বর মাসে ‘ফেস্টিভ্যাল
অফ ফিশার’স
গোস্ট’
পালন করেন ক্যাম্পবেলটাউনের বাসিন্দারা। সেখানে ‘ভূত’ সেজে ঘুরে বেড়ান। স্মরণ করেন ফ্রেডরিকের
সেই ‘ভূত’কে। যে খালের ধারে মাঠে ফ্রেডরিকের দেহ
মিলেছিল, সেই
খালের নামও রাখা হয়েছিল ‘ফিশার’স গোস্ট ক্রিক’।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন