ভাবসম্প্রসারণ লিখতে হলে :-
কোন সংক্ষিপ্ত গদ্যে বা পদ্যে আত্মগোপন করে থাকা ভাবকে বিশদভাবে প্রকাশ করাকেই ভাবসম্প্রসারণ বলে। ভাবসম্প্রসারণের ব্যাপারে যে বিষয়গুলি মনে রাখা দরকার সেগুলি হল:-
১) প্রথমেই প্রদত্ত গদ্যাংশ বা পদ্যাংশটি ভালো করে পড়ে নেওয়া প্রয়োজন। তারপর অন্তর্নিহিত মূল ভাবটি বোঝবার জন্যে সচেষ্ট হতে হবে।
২) উপমা,রূপক ইত্যাদির আড়ালে মূল ভাবটি অনেক সময় প্রচ্ছন্ন থাকে। সেক্ষেত্রে উপমার মর্ম উদ্ধার করে বা রূপক উপলব্ধি করে মূল ভাবটি বিশ্লেষণের কাজে অগ্রসর হওয়া দরকার।
৩) মূল ভাবসত্যের বিশ্লেষণ বিস্তারিত আকারের হবে; স্বল্প মধ্যে প্রকাশিত কোনো বৃহৎ ভাবকে লেখক যেন বোঝবার তাগিদে প্রসারিত করছেন।
৪) মূল ভাবটি প্রসারণের সময় প্রদত্ত গদ্যাংশ বা পদ্যাংশের বহির্ভূত নানা ধরনের বিষয় অবতারণা করা চলে। যেমন, প্রয়োজন বোধ করলে ঐতিহাসিক, পৌরাণিক বা বৈজ্ঞানিক তথ্য-সমাবেশ করা যায়; মূল বিষয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উপমা বা উদ্ধৃতিও ব্যবহার করা চলে। তবে সব সময়েই লক্ষ্য রাখতে হবে, এগুলো যেন ভাবসত্যকে বিস্তৃতভাবে প্রকাশের অনুকূল হয়। প্রয়োজনীয় ও প্রাসঙ্গিক তথ্য সমাবেশ না ঘটলে ভাবসম্প্রসারণ মনোজ্ঞ বা আকর্ষণীয় হতে পারে না; বরং ভারাক্রান্ত, পূর্বাপর সঙ্গতিহীন ও নীরস হয়ে পড়ে। উদ্ধৃতি দেবার সময় তা নির্ভুলভাবে দেবার চেষ্টা করতে হবে।
৫) ব্যাখ্যার মতো প্রসঙ্গ নির্দেশের প্রয়োজন বা সুযোগ এখানে নেই। কোনো বিশেষ শব্দের টীকা-টিপ্পনী দেবার প্রশ্নও এখানে অবান্তর। আবার মনে রাখা দরকার, ভাবসম্প্রসারণ মানে প্রবন্ধ রচনা নয়। অতএব প্রবন্ধের অনুসরণে কলেবর বৃদ্ধির প্রয়োজন এখানে নেই। মনে রাখা দরকার, প্রকৃতির দিক থেকে না হোক্, আকৃতির দিক থেকে ব্যাখ্যার সঙ্গেই বরং ভাবসম্প্রসারণের সাদৃশ্য বেশি।
৬) উচ্ছ্বাসবিহীন ভাষায় লিখতে হবে। তবে এই ভাষা সাহিত্য গুণান্বিত হওয়া উচিত। সারসংক্ষেপ বা বস্তু-সংক্ষেপের মতো নিরলঙ্কার ভাষা ব্যবহারের এখানে প্রয়োজন নেই।
৭) অনুচ্ছেদ করে-প্রথম অনুচ্ছেদে মূল বক্তব্য বিষয়, দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে বক্তব্য বিষয়ের সমর্থনে উদাহরণ এবং তৃতীয় অনুচ্ছেদে বক্তব্য বিষয় সম্বন্ধে মন্তব্য বা নিজের অনুভূতির পরিচয় প্রকাশ করা বাঞ্ছনীয়।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন