ভাবসম্প্রসারণ:-
বাস্তুতন্ত্রে খাদ্য-খাদকের সম্পর্কের মতো দুর্বলের উপর সবলের
অত্যাচার জাগতিক ঘটনা। এই অত্যাচার ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য অপেক্ষাকৃত সবলেরা
দুর্বল মানুষের উপর অত্যাচার করে এবং জয়ের নির্দেশ স্বরূপ বিজয়তোরণ রচনা করে।
কালের প্রবাহে বা অধিকতর সবলের দম্ভে সেই তোরণ যখন ভেঙে যায়, তখন
সেই তোরণের পাথর দিয়েই শিশুরা খেলার ঘর নির্মণ করে।
নজরুলের গানে আছে,'চিরদিন কাহারো সমান নাহি
যায়'। অর্থাৎ পরিবর্তনশীল জগতে নিয়ত পরিবর্তনশীলতার মধ্যে
ফকির রাজা হয় আবার রাজাও ফকির হয়। তেমনি অত্যাচারী শক্তি নানাবিধ অত্যাচারের
মাধ্যমে নিজেদের বিজয়ী শক্তিরূপে প্রতিষ্ঠা করে এবং সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখবার
জন্য বিজয়তোরণ নির্মাণ করে, কিন্তু সেই শক্তিরও পতন হয়।
বিশেষ করে, অত্যাচার, নিপীড়নে মাধ্যমে
জোর করে যখন বিজয়ী শক্তি নিজেদের জাহির করে, সেই বিজয়ের
মধ্যেই সুপ্ত থাকে ধ্বংসের বীজ। কেননা বহু মানুষের কান্না, আর্তনাদ
জমা থাকে ভবিষ্যতের জন্য। সেই ভবিষ্যৎ-ই বিজয়ী শক্তিকে ধূলিসাৎ করে। কারণ বহু রক্ত,
কান্না, ঘাম ঝরিয়ে যে বিজয়-বিজয়ীর করায়ত্ত হয়,
সেই বিজয়ের পেছনে থাকে পতনের অবশ্যম্ভাবী বীজ। অত্যাচারের বাণী
নীরবে নিভৃতে কেঁদে কেঁদে ফিরে একসময় বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে বিজয়ীর কাছে। এটাই
কালের নিয়ম এবং ইতিহাসও তার সাক্ষ্য দেয়।শুধু তাই নয়, যখন
রাজছত্র ভেঙে পড়ে, ভেঙে পড়ে বিজয়ীর বিজয়তোরণ তখন সেই দম্ভ,
সেই আভিজাত্য ধুলায় মিশে যায়। শিশুরা তখন সেই বিজয়ের স্মারক ভাঙা
পাথরের টুকরো নিয়ে আপন খেলার ঘর নির্মাণ করে। সেই খেলার ঘরে থাকে না কোন দম্ভ বা
বিজয় প্রতিষ্ঠার উল্লাস। নেহাতই শিশুর সারল্য এবং সর্বজনীনতায় সেই খলার ঘর হয়
ভরপুর।
সুতরাং অত্যাচারী শাসকের শক্তি যতই প্রতিস্পর্ধী ও শক্তিশালী
হোক্ না কেন, সেই শক্তির বিনাশ ঘটে এবং তখনই শক্তির
মদোন্মত্ততা শিশুর খেলাঘরে পরিণত হয়ে যায়।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন