রাষ্ট্রের
উৎপত্তি সম্পর্কে আলোচনা
রাষ্ট্রের উৎপত্তি ঘটে বহুকাল আগে প্রাচীন গ্রিসে।
'রাষ্ট্র'(state) বলতে গ্রিক দার্শনিকরা 'Polis' শব্দটি ব্যবহার করতেন। রোমান দার্শনিকরা
রাষ্ট্রকে অভিহিত করেছিলেন 'Civitas' নামে।
পরে টিউটনরা বৃহৎ রাষ্ট্রের কথা সর্বপ্রথম তুলে ধরেন। রাষ্ট্রকে তাঁরা 'Status' আখ্যা
দেন। ষোড়শ শতাব্দীতে আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার জনক মেকিয়াভেলি তাঁর The Prince গ্রন্থে 'State' শব্দটি
ব্যবহার করেন।
সমাজের মৌলিক ও সর্বাপেক্ষা তাৎপর্যপূর্ণ
প্রতিষ্ঠান হল রাষ্ট্র। সমাজবিকাশের একটি নির্দিষ্ট স্তরে রাষ্ট্রের জন্ম। কিন্তু
কখন ও কীভাবে রাষ্ট্রের উৎপত্তি ঘটে সে সম্পর্কে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতবিরোধ
দেখা যায়। রাষ্ট্রের উৎপত্তি বিষয়ক তত্ত্বগুলির মধ্যে দুটি মূল ধারা রয়েছে। সেগুলি
হল i) দার্শনিক
তত্ত্ব এবং ii) ঐতিহাসিক তত্ত্ব। দার্শনিক পদ্ধতির
মাধ্যমে গবেষণা করে যেসব তত্ত্ব রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে তাদের চিন্তাধারা তুলে
ধরেছে সেগুলি হল-ঐশ্বরিক উৎপত্তিবাদ, বলপ্রয়োগ
মতবাদ, সামাজিক
চুক্তি মতবাদ। অন্যদিকে, ঐতিহাসিক
পদ্ধতি অবলম্বন করে গড়ে উঠেছে বিবর্তনবাদ বা ঐতিহাসিক মতবাদ।
রাজনৈতিক তত্ত্বের আলোচনায় জাতীয় জনসমাজ, জাতি
এবং রাষ্ট্র-সম্পর্কিত ধারণা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ব্যুৎপত্তিগতভাবে জাতীয় জনসমাজ
(Nationality) ও জাতি (Nation)-র
মধ্যে বিশেষ পার্থক্য না থাকলেও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে এই দুটি শব্দের অর্থ
নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। অনেকে জাতি ও রাষ্ট্রকে অভিন্ন বলে গণ্য করেন। কিন্তু জাতীয়
জনসমাজ, জাতি
ও রাষ্ট্রের মধ্যে প্রকৃতিগত স্বাতন্ত্র রয়েছে।
অধ্যাপক টমাস হিল গ্রিনের মতো রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা
রাষ্ট্র বা জাতির মধ্যে কোনো ভেদরেখা টানতে চাননি। তাঁরা রাষ্ট্রকে রাজনৈতিকভাবে
সংগঠিত কোনো জাতি বা জনসমষ্টি বলে আখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু জাতি ও রাষ্ট্রের ধারণা
এক নয়। পণ্ডিতদের মতে, রাষ্ট্র
একটি রাজনৈতিক ধারণা। অন্যদিকে জাতি হল এক ভাবগত উপলব্ধি বিশেষ। রাষ্ট্র গঠিত হলেও
জাতিগঠনের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ নাও হতে পারে। সাম্প্রদায়িকতাবাদ, আঞ্চলিকতাবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদের মতো
উপাদানগুলি জাতি গঠনের পথে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। অবশ্য জাতি ও রাষ্ট্র একে
অপরের পরিপূরক বলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা রায় দিয়েছেন। এই কারণে রাষ্ট্রকে জাতীয়
রাষ্ট্র বলা হয়।
জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার সম্পর্কিত তত্ত্ব
বহুকাল আগে 'এক
জাতি,এক
রাষ্ট্র' নীতিকে
তুলে ধরে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এই তত্ত্বের পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি দেখিয়েছেন।
ইউরোপে নবজাগরণ ও ধর্ম সংস্কার আন্দোলনের ফলশ্রুতি স্বরূপ জাতীয়তাবাদের উৎপত্তি
ঘটে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তার বিকৃত রূপ ফুটে ওঠে। বিশ্বের চিন্তানায়করা তাই
জাতীয়তাবাদের বিকল্প হিসেবে তুলে ধরেন আন্তর্জাতিকতাবাদ।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন