রাষ্ট্রবিজ্ঞানে গণতন্ত্রের উত্থানের প্রাচীন ইতিহাস
গণতন্ত্র একটি প্রাচীন ধারণা। গ্রিসের এথেন্সে
গণতন্ত্র কথাটি প্রচলিত ছিল। ভারতের প্রাচীন ধর্মগ্রন্থগুলিতেও গণতান্ত্রিক
আদর্শের সন্ধান পাওয়া যায়। তবে ইউরোপের নবজাগরণের ফলে মধ্যযুগের শেষভাগে
গণতান্ত্রিক আদর্শ ব্যাপ্তি লাভ করে। একটি আদর্শ ধারণারূপে গণতন্ত্রের পূর্ণ বিকাশ
লক্ষ করা যায় অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীতে। ফরাসি বিপ্লব, আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রাম গণতান্ত্রিক
আদর্শ রূপায়ণে উল্লেখযোগ্য সোপানরূপে চিহ্নত হয়ে আছে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে ইউরোপের
উদারনৈতিক দর্শন গণতন্ত্রকে এক নতুন চেহারা দেয় যা উদারনৈতিক গণতন্ত্ররূপে পরিচিত।
রুশোর সাধারণ ইচ্ছার তত্ত্ব, বেন্থামের
হিতবাদ, মিলের
ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ, গ্রিনের
প্রতিরোধের তত্ত্ব, অ্যাডাম
স্মিথের অবাধ বাণিজ্য ও ব্যক্তিগত উদ্যোগের ধারণা উদারনৈতিক গণতন্ত্রকে সমৃদ্ধ
করে।
সম্প্রতিককালে গণতন্ত্রের শ্রেণিবিন্যাস করেছেন
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ডেভিড হেল্ড। তিনি তাঁর Models of Democracy গ্রন্থের
ভূমিকায় এই অভিমত প্রকাশ করেছেন যে-গণতন্ত্রের ইতিহাস বড়ো অদ্ভুত ও বিভ্রম কারী।
প্রতিটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিজেকে গণতান্ত্রিক বলে দাবি করলেও তারা যা বলে আর যা
করে তার মধ্যে বিপুল পার্থক্য রয়েছে। ফ্যাসিবাদ ও নাৎসিবাদ কিভাবে ধ্বংস করতে
চেয়েছে গণতন্ত্রকে, কত
সুগভীর সামাজিক সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র গড়ে উঠেছে হেল্ড তা
দেখিয়েছেন।
তত্ত্বগত দিক থেকে গণতন্ত্রের সম্পূর্ণ বিপরীত
শাসনব্যবস্থা হল একনায়কতন্ত্র। একনায়কতন্ত্রের ভিত্তি রচনায় যেসব দার্শনিক বিশেষ
ইন্ধন জুগিয়েছেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন জার্মান দার্শনিক হেগেল, নিৎসে এবং ট্রিট্স্কে। একনায়কতন্ত্রের মূলভিত্তি হল
রাষ্টীয় শক্তি বা পশুবল। একনায়কতন্ত্রে রাষ্ট্র প্রধান, জনগণ অপ্রধান। একনায়কতন্ত্রে রাষ্ট্রের
যূপকাষ্ঠে জনগণের স্বাধীনতা, স্বাতন্ত্র্য
ও অধিকারকে বলি দেওয়া হয়। এখানে প্রথমে রাষ্ট্র, পরে
জনগণ। একনায়কতন্ত্রে রাষ্ট্র হল সর্বাত্মক, সামগ্রিক
ও সর্বশক্তিমান। প্রাচীন রোমে নিরো ও জুলিয়াস সিজারের রাজত্বে, ফ্রান্সে নেপোলিয়নের আমলে, ইতালিতে কাউন্ট ক্যাভুর এবং বিংশ শতাব্দীতে
জার্মানিতে হিটলার, ইতালিতে
মুসোলিনি ও স্পেনে ফ্রাঙ্কোর শাসনকালে একনায়কতন্ত্রের উদ্ভব ঘটে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন