মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০২৩

নর্তকীর প্রতি অবিচার, পিতার অভিশাপে শুকিয়ে যায় নগরী

 

সম্রাট
আকবর ফতেপুর সিক্রি ছাড়র মূল কারণ



১৫৭১
খ্রিস্টাব্দে দিল্লি থেকে এই ফতেপুর সিক্রিতেই রাজধানী সরিয়ে আনেন সম্রাট আকবর।
তার পর ১৫৮৫ খ্রিস্টাব্দ অবধি এটাই ছিল মুঘল রাজধানী। তার পর আবার রাজধানী
স্থানান্তর করেন আকবর। তার পর থেকে পরিত্যক্ত ও ভৌতিক হয়ে পড়ে আছে অতীতের
মুঘল-গৌরব। আকবর যখন এখানে রাজধানী স্থানান্তর করেন
, তখন এর পরিচয় ছিল সিক্রি নামে একটি সাধারণ গ্রাম। ১৫৭৩ খ্রিস্টাব্দে
গুজরাত জয়ের স্মারক হিসেবে এই নগরীর নাম আকবর রেখেছিলেন
ফতেপুর সিক্রি। অর্থাৎ জয়ের শহর। গুজরাত বিজয়কে স্মরণীয়
করে রাখতে এই নগরীতে তৈরি হয়েছিল
বুলন্দ
দরওয়াজা

আকবরের আগেও মুঘল শাসকদের পছন্দের জায়গা ছিল এই গ্রাম। বাবর ও হুমায়ুন
, দুজনেই অবসরে আসতেন এই জনপদে। তখন মূল আগ্রা
শহর থেকে অনেকটাই নির্জন ছিল সিক্রি গ্রাম। মুঘল সম্রাটরা আসতেন সড়কপথে বা যমুনার
জলপথে।৩ কিমি লম্বা
,
কিমি চওড়া এই প্রাসাদনগরীকে তিন দিকে ঘিরে ছিল দুর্ভেদ্য ৮ কিমি লম্বা প্রাচীর।
এক দিকে ছিল গভীর জলাশয়। লাল বেলেপাথরে তৈরি মূল প্রাসাদ ও নগরীর অন্য স্থাপত্যে
নির্মাণবৈশিষ্ট্যে হিন্দু ও মুসলিম দুই ঘরানার মেলবন্ধন স্পষ্ট। প্রাসাদের
উল্লেখযোগ্য অংশগুলি হল দেওয়ান-ই-খাস
, দেওয়ান-ই-আম, ইবাদতখানা, নহবতখানা এবং বীরবল মহল।
পাশাপাশি
, পর্যটকদের
আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে আছে টাকশাল
, দফতরখানা, কারখানা, খাজানা এবং হামাম। এছাড়া
ফতেপুর সিক্রিতে রয়েছে সেলিম চিশতীর সমাধি এবং জামা মসজিদও যা পু্ণ্যার্থীদের
কাছে অতি প্রিয় গন্তব্যস্থান।



কিন্তু
পছন্দের এই নগরীও এক দিন ফেলে চলে গিয়েছিলেন সম্রাট আকবর। তার মূল কারণ ছিল
জলকষ্ট। গ্রীষ্মে তীব্র জলকষ্ট হয় এই অঞ্চলে।
১৫৭১ থেকে ১৫৮৫ অবধি ফতেপুর
সিক্রি ছিল মুঘলদের রা্জধানী। রাজধানী স্থানান্তরিত হওয়ার পরেও কিছু দিন জ্বলে ছিল
ফতেপুর সিক্রির বাতি। ১৬১০ খ্রিস্টাব্দে সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত হয়ে যায় এই নগরী।
জনশ্রুতি, এই জলকষ্টও সম্পূর্ণ
প্রাকৃতিক ছিল না। বরং
, এর
পিছনে সক্রিয় ছিল অভিশাপ। ফতেপুর সিক্রিতে সম্রাট আকবরের প্রিয় নর্তকী ছিলেন
জারিনা। তাঁর জন্য নির্দিষ্ট ছিল আলাদা মহল।
কথিত, জারিনার এই উত্থানে নাকি
ঈর্ষাকাতর হয়ে পড়েন আকবরের হারেমের বাকি নারীরা। তাঁরা ষড়যন্ত্র করেন জারিনার
বিরুদ্ধে। সম্রাটের সামনে চোর সাব্যস্ত হন জারিনা। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে
ব্যর্থ তিনি।

চুরির শাস্তি হিসেবে আকবর তাঁর দুটি হাত কেটে নেওয়ার শাস্তি দেন। এর পর জারিনার
আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। রাতারাতি তিনি উধাও হয়ে যান।
সন্তানের
শোকে নাকি উন্মাদপ্রায় হয়ে যান জারিনার বাবা। তাঁর অভিশাপেই নাকি ধীরে ধীরে শুকিয়ে
যায় ফতেপুর নগরী ও তার সংলগ্ন এলাকা।



ভারতীয়
পুরাতাত্বিক সর্বেক্ষণ (এএসআই)-এর সাম্প্রতিক খননে দাবি
, মুঘল বংশের আগে খ্রিস্টীয়
দ্বিতীয় অব্দে এখানে শুঙ্গ বংশের শাসন ছিল। দ্বাদশ শতকে সংক্ষিপ্ত সময় শাসন করে
সিকরোয়ার রাজপুত বংশও।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন