ম্যালেরিয়া
ম্যালেরিয়া প্রোটোজোয়া পর্বভুক্ত প্লাসমোডিয়াম
নামক পরজীবী আক্রান্ত রোগ। ম্যালেরিয়া শব্দটি
সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন Torti ১৭৫৩
সালে। ইতালিয় শব্দ 'Mal' যার
অর্থ দূষিত এবং 'Aria' যার
অর্থ বায়ু। এদের থেকেই Malaria' (ম্যালেরিয়া) শব্দটি এসেছে। স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশা এই রোগের
জীবাণুর বাহক। ম্যালেরিয়ার পরজীবী লোহিত রক্তকণিকার মধ্যে বংশবৃদ্ধি করে, ফলে রোগীর শরীরে রক্তসল্পতার
লক্ষণ দেখা যায়।
অবশ্য প্রথম দিকে মানুষ মনে করত দূষিত বায়ু সেবনেই এই রোগ
হয়। প্রাচীন গ্রীসের ফিজিসিয়ান হিপোক্রেটিস, যাকে
"ঔষধের জনক" বলা হয়, তিনি
প্রথম এই রোগের লক্ষণসমুহের বর্ণনা দেন এবং বছরের কোন সময় এটা হয় ও কোন জায়গায়
রোগীরা বাস করে সেই তথ্যের সঙ্গে একটা সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করেন।
ম্যালেরিয়ার প্রথম নথীবদ্ধ চিকিৎসা পদ্ধতির
সময়কাল ১৬০০ সাল, যখন
পেরুর আদিবাসীরা সিঙ্কোনা গাছের তিক্ত ছাল ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করত। ১৬৪৯ সাল
নাগাদ ইংল্যান্ডে এটাই "জেসুইট পাওডার" হিসেবে পাওয়া যেত।
১৮৮০ সাল নাগাদ চার্লস ল্যাভেরন লোহিত রক্ত
কণিকা থেকে ম্যালেরিয়ার কারণ হিসেবে একটিমাত্র কোষবিশিষ্ট পরজীবী প্রোটোজোয়াকে
চিহ্নিত করেন। ফলে শত বছর ধরে চলা দূষিত বায়ু সেবনের ফলে রোগ সৃষ্টির ভুল ধারণার
অবসান ঘটে। ১৮৯৭ সালে ভারতে কর্মরত ব্রিটিশ ডাক্তার স্যার রোনাল্ড রস প্রমাণ করেন
যে Anopheles (অ্যানোফিলিস)
মশা এই রোগের বাহক হিসেবে কাজ করে। এ যুগান্তকারী আবিষ্কারের কারণে তাকে ১৯০২ সালে
চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়।
ম্যালেরিয়া সাধারণত ব্লাড ফিল্মস ব্যবহার করে
রক্তের দূরবীক্ষণ পরীক্ষা অথবা অ্যান্টিজেন-ভিত্তিক দ্রুত ডায়গনস্টিক পরীক্ষার
মাধ্যমে নির্ণয় করা হয়। আধুনিক প্রযুক্তিতে প্যারাসাইটের ডিএনএ শনাক্ত করার জন্য
পলিমারেজ শৃঙ্খল বিক্রিয়ার ব্যবহার উন্নত করা হয়েছে, কিন্তু এর খরচ ও জটিলতার জন্য
ব্যাপকভাবে ম্যালেরিয়া-কবলিত এলাকায় ব্যবহার করা হয় না।
কিভাবে ম্যালেরিয়া রোগ বিস্তার হয়?
অ্যানোফিলিস মশা যখন কোনো ম্যালেরিয়া
রোগাক্রান্ত রোগীর রক্তপান করে তখন ম্যালেরিয়া পরজীবীর গ্যামেটোসাইট দশা(পুং ও
স্ত্রী গ্যামেটোসাইট) মশার দেহে প্রবেশ
করে। উক্ত দশাগুলি থেকে মশার দেহে স্পোরোজয়েট দশায় রূপান্তরিত হয়ে মশার লালা
গ্রন্থিতে অবস্থান করে। স্পোরোজয়েট দশাযুক্ত মশাটি যখন সুস্থ মানুষের রক্তপান করে
তখন উক্ত দশাগুলি সুস্থ লোকটির রক্তে মিশে যায়, আক্রান্ত
ব্যক্তির যকৃতে স্পোরোজয়েটগুলি মেরোজয়েটে রূপান্তরিত হয়। মেরোজয়েটগুলি রক্তে মুক্ত
হয়ে লোহিত রক্তকণিকাগুলিকে ধ্বংস করে।
ম্যালেরিয়ার প্রধান লক্ষণগুলি হল:-
১) কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা
২) উচ্চ তাপমাত্রা (105F-106F)
৩) তীব্র মাথার যন্ত্রণা সহ বমি বমি ভাব
৫) কিছুক্ষণ পর ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে যাওয়া
ম্যালেরিয়া জ্বরের তিনটি দশা দেখা যায়, যথা-
১) শীত দশা (১০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা) স্থায়ী হয়
২) উত্তাপ দশা (১ ঘন্টা থেকে ৪ ঘন্টা) স্থায়ী
হয়
৩) ঘাম দশা (২ ঘন্টা থেকে ৩ ঘন্টা) স্থায়ী হয়
প্রত্যেক বছর, প্রায়
৫১.৫ কোটি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হন এবং প্রায় ১০ থেকে ৩০ লক্ষ মানুষ প্রাণ
হারান যাদের মধ্যে বেশিরভাগই আফ্রিকার সাহারা অঞ্চলের শিশু। ম্যালেরিয়া খুবই
পরিচিত একটি সংক্রামক রোগ এবং এটি একটি বৃহৎ জনস্বাস্থ্য সমস্যা।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন