বুধবার, ২২ মার্চ, ২০২৩

অতীতে কলকাতার কোন এলাকা সিনেমাপাড়া হিসাবে পরিচিত ছিল

 কলকাতার
সিনেমাপাড়া



পুরনো কলকাতার ইতিহাসের এক অনন্য নিদর্শন উত্তর
কলকাতার হাতিবাগান এলাকা। পলাশির যুদ্ধ থেকে শুরু করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বা
সিনেমা হলে দর্শকের ভিড়
, হাতিবাগানের
ভূমিকা অনস্বীকার্য।
আর বতর্মান
প্রজন্মের খুব কম মানুষই জানেন কলকাতার হাতিবাগানের পরিচয় ছিল কলকাতার
সিনেমাপাড়া হিসেবে। এখানে ছিল অনেকগুলি প্রেক্ষাগৃহ বা
সিনেমা হল।

সপ্তাহে তিন দিন- বৃহস্পতি, শনি ও রবিবার কলকাতার এই
এলাকা বেশ জমজমাট হয়ে উঠতো সিনেমা দেখার জন্য।
যদিও সাম্প্রতিক
কালে মাল্টিপ্লেক্সের কারণে এই এলাকার সিঙ্গেল স্ক্রিন সব কটি সিনেমা হল-ই প্রায়
বন্ধ হয়ে গেছে। সিনেমাপাড়ার ইতিহাস বহন করে চলেছে কেবল দুটি সিনেমা হল
- একটি মিনার ও অপরটি স্টার



১৮৮৩ সালে জামশেদজি ফ্রামজি মদন নামে এক পার্সি
বণিক উত্তর কলকাতার হাতিবাগান এলাকায় 
কর্নওয়ালিস এবং ক্রাউন নামে দুটি থিয়েটার হল নির্মাণ করেন। এরপর অবশ্য ১৯৩৫
সালে
কর্নওয়ালিস-এর নাম বদলে হয়ে যায় উত্তরা এবং ক্রাউন-এর নাম বদলে হয়ে যায় শ্রী। এই উত্তরা-ই ছিল হাতিবাগান এলাকার প্রথম
সিনেমা হল।



তারপর উত্তরার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ায় এই এলাকায়
একে একে আরও সিনেমা হল তৈরি করতে উদ্যোগী হয়ে ওঠেন অনেকে।
এই
এলাকায় গড়ে ওঠা সিনেমা হল
-গুলি
হল
- শ্রী (১৯৩১ সালের ২৫ এপ্রিল), রূপবাণী (১৯৩১ সালের ১৯ ডিসেম্বর), চিত্রা (১৯৩১ সালে) পরে
১৯৬৩ সালের ৫ এপ্রিল নাম বদলে হয়
মিত্রা, রাধা, টকি শো হাউস (১৯৩০ সালে), দর্পণা (১৯৩১ সালে), ‘খন্না, বিধুশ্রী
পূর্ণশ্রী



এদের মধ্যে রূপবাণী-ই ছিল তখনকার দিনে সবচেয়ে বিলাসবহুল কারণ
হল
, সেখানে
ছিল শীততাপ নিয়ন্ত্রিত
, দর্শকদের
প্রবেশ ও নির্গমনের জন্য ছিল তিনটি লবি
, গাড়ি
রাখবার জন্য ছিল আলাদা জায়গা
, সুসজ্জিত
একটি বাগান এবং মহিলাদের জন্য ছিল বিশ্রামাগার।
আর এর নামকরণও করেছিলেন
স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এছাড়া নিউ থিয়েটার্স স্টুডিয়োর সিনেমা
চিত্রা হলের উদ্বোধন করেন স্বয়ং নেতাজি
সুভাষচন্দ্র বসু
, আর
পরে এটি কিনে নেন হেমন্তকুমার মিত্র আর নতুন নাম হয় মিত্রা। এদের মধ্যে কেবলমাত্র
রাধা সিনেমা হলের তৎকালীন মালিক স্বর্গীয় বলাইচাঁদ বিশ্বাস ইংরেজদের বিরুদ্ধে
প্রতিবাদ জানাতে শুধুমাত্র বাংলা ছবি দেখানোর নিয়ম করেছিলেন। আর বাংলা ছাড়া
হিন্দি
, ইংরেজি
ছবি দেখানো হত ফড়িয়াপুকুর এলাকার
টকি
শো হাউস
সিনেমা
হলে



শুধু সিনেমা পাড়া নয়, ইতিহাসে এখানেই নাকি বাংলার
তৎকালীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা ইংরেজদের দখল থেকে কলকাতাকে মুক্ত করার লক্ষ্যে
, ফোর্ট উইলিয়াম আক্রমণ করার
জন্য হস্তিবাহিনী নিয়ে এই এলাকায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। আর তারপর থেকেই এই এলাকার নাম
হয় হাতিবাগান। যদিও আর একটা কথা শোনা যায়
, কোন
এক ধনী ব্যক্তি
, যাঁর
পদবি ছিল হাতি
, তিনি
বাগানবাড়ি বানিয়েছিলেন এই এলাকায়। আর তার থেকেই এই জায়গার নাম হয়
হাতিবাগান। অবশ্য এলাকার নামকরণে কোনটা সঠিক তা পরিষ্কার
করে বলা যায় না।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন