রবিবার, ২৬ মার্চ, ২০২৩

কলকাতার জাতীয় গ্রন্থাগার ঘিরে রয়েছে বিভিন্ন ভৌতিক কাহিনী


 কলকাতার
জাতীয় গ্রন্থাগার



আলিপুরের অভিজাত বেলভিডিয়ার গার্ডেন হাউস-ই হল
বর্তমানে জাতীয় গ্রন্থাগার। ঔরঙ্গজেবের নাতি এবং প্রথম বাহাদুর শাহ জাফরের ছেলে
যুবরাজ আজিম উস খান  নিজে থাকার জন্য ১৭০০
খ্রিস্টাব্দে বানিয়েছিলেন
বেলভিডিয়ার
গার্ডেন হাউস

তিনি ছিলেন বাংলা-বিহার-ওড়িশার সুবেদার। ইটালিয়ান ভাষায় বেলভেডেয়ার শব্দের অর্থ মনোরম
দৃশ্য। বিশেষ গথিক ঘরানার স্তাপত্যকে বলা হয়
বেলভিডিয়ার



ইংরেজদের দ্বারা গদিচ্যুত হওয়ার পর মীরজাফর
আলিপুরের এই বাড়িতে চলে আসেন।
পরে তিনি বেলভিডিয়ার গার্ডেন হাউস উপহার
দিয়েছিলেন ওয়ারেন হেস্টিংসকে। ১৭৭২-১৭৭৪ সাল পর্যন্ত বাংলার গভর্নর ছিলেন ওয়ারেন
হেস্টিংস। বক্সার যুদ্ধের পরে তিনি ইংল্যান্ডে ফিরে যান। এরপর তিনি ভারতের গভর্নর
জেনারেল হয়ে ফিরলেন ১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে এবং তাঁর সঙ্গে এসেছিলেন প্রেমিকা সুন্দরী
জার্মান ব্যারনেস মারিয়ান ইনহফ। সাধের বেলভিডিয়ার হয়ে উঠল তাঁদের বাসভবন। এরপর ১৭৮০
খ্রিস্টাব্দে বেলভিডিয়ার হাউসকে মেজর টলির কাছে বিক্রি করে দেন হেস্টিংস। বহু
হাতবদলের পর লর্ড ডালহৌসির আমলে বেলভিডিয়ার হয়ে ওঠে ভারতের লেফ্টেন্যান্ট গভর্নরের
বাসভবন। দীর্ঘ ইতিহাসের সাক্ষী এই ভবন শেষে ১৯৫৩ সালে হয় জাতীয় গ্রন্থাগার।



অবশ্য ব্রিটিশ কলকাতায় এই বেলভিডিয়ার ভবন
সাক্ষী ছিল এক ঐতিহাসিক ডুয়েলের। বেলভিডিয়ার এস্টেটের কাছেই একটি গাছের নীচে
হয়েছিল সেই ডুয়েল।
জার্মান ব্যারনেস মারিয়ানকে নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
হয়েছিল ওয়ারেন হেস্টিংস এবং ফিলিপ ফ্রান্সিস
- এদের
মধ্যে
ডুয়েলে হেস্টিংসের গুলিতে আহত
হয়েছিলেন ফ্রান্সিস।
শেষ পর্যন্ত বিয়ে
করেছিলেন জার্মান ব্যারনেস মারিয়ান ইমহফ এবং ওয়ারেন হেস্টিংস
হেস্টিংস
দম্পতি বলডান্স করতেন এস্টেটের হলরুমে। নাচের আসরে যোগ দিতেন কলকাতার ব্রিটিশ
সমাজের আমন্ত্রিত অভিজাতরা। হেস্টিংসের শেষ জীবন কেটেছিল জন্মভূমি ইংল্যান্ডে এবং
তিনি সেখানেই মারা যান।
কিন্তু তিনি
নাকি এখনও ভুলতে পারেননি বেলভিডিয়ার এস্টেটকে। ইংরেজি বর্ষবরণের গভীর রাতে নাকি
নির্জন এস্টেটের সামনে এসে থামে এক জুড়িগাড়ি। পার্টিতে বলডান্সে অংশ নিতে আসেন
গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস!



এছাড়া বর্তমানে এখানকার অর্থাৎ জাতীয়
গ্রন্থাগারের রক্ষীরা জানিয়েছেন রাতের অন্ধকারে নাকি এক মহিলার কান্না শোনা যায়। আবার
কেউ কেউ বলেন
, লর্ড
মেটক্যাফের স্ত্রী-র আত্মা এখনও এখানে ঘুরে বেড়ায়। কোনও বই পড়ার পরে সেটি ঠিক করে
তাকে তুলে না রাখলে নাকি ঘাড়ের কাছে ভারী নিশ্বাসের শব্দ শোনা যায়।
আর
এসবের জন্যই জন্যই কলকাতার ভূতবিশ্বাসীদের কাছে অন্যতম
ভৌতিক জায়গা হল এটি।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন