১
টাকা = ১ ডলার কখনই হওয়া উচিত নয়
১৯৪৭
সালে ভারত যখন ব্রিটিশ শাসনমুক্ত হয়ে স্বাধীন দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করল, সে সময় আক্ষরিক অর্থেই ভারতের
১ টাকা আমেরিকার ১ ডলারের সমতুল্য ছিল। তারপর কালক্রমে আমেরিকান ডলারের চেয়ে
দুর্বল হয়েছে ভারতীয় টাকা। আমেরিকান ডলার এবং ভারতীয় মুদ্রা সমান সমান হয়ে গেলে সুবিধা
ও অসুবিধা দুটোই রয়েছে।বরং বলা যায় সুবিধার চেয়ে অসুবিধা বেশি-ই হবে। তাই ভারতের মতো উন্নয়নশীল
দেশে ১ টাকা = ১ ডলার কখনই কাম্য নয়।
যাই হোক
প্রথমেই আসি ডলার এবং মুদ্রা সমান হয়ে গেলে কি কি সুবিধা হবে সে সম্পর্কে:-
১)
নিত্যপ্রয়োজনীয় এবং বিভিন্ন বিলাসবহুল জিনিসের দাম কমবে। উদাহরণ
হিসাবে ধরা যাক, টাকা
এবং ডলার সমান মূল্যের হলে আইফোন মিলবে
মাত্র ৬০০ টাকায়।এর কারণ, আমেরিকায়
আইফোনের দাম ৬০০ ডলার থেকে শুরু।
২) টাকা মূল্যবান হলে ভারতে
বিদেশ থেকে আমদানি সহজ হবে। আরও সস্তায় অনেক বেশি জিনিস বিদেশ থেকে ভারতে আমদানি
করা যাবে। ফলে ভারতের বাজারে জিনিসের দাম কমবে।
৩) পেট্রল, ডিজ়েলের দাম কমায় পরিবহণের
খরচও কমবে যথেষ্ট।
৪) মাত্র কয়েক হাজার টাকায়
বিদেশে ছুটি কাটিয়ে আসা যাবে।
এবার আসি ডলার এবং মুদ্রা
সমান হয়ে গেলে কি কি অসুবিধা হবে সে সম্পর্কে:-
১) ভারতের রফতানি খরচ বাড়বে।
ভারতে উৎপন্ন জিনিসের দাম অনেক বেশি হবে অন্য
দেশে। ফলে তা বিদেশে রফতানি করার জন্যও খরচ হবে অনেক বেশি।
২) বহু বৈদেশিক বাণিজ্যিক
প্রতিষ্ঠান ভারত ছেড়ে চলে যাবে। কারণ, বিদেশ থেকে ভারতে বাণিজ্যের
অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য সুলভ শ্রমিক। সস্তায় এই দেশে পরিশ্রমযোগ্য শ্রমিক মেলে।
তাই ভারতে বাণিজ্যের খরচ অন্য অনেক দেশের চেয়ে কম।
৩) আইটি সেক্টরে ভারতের ২৭
শতাংশ কর্মসংস্থান হয়ে থাকে। এর ফলে তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রগুলিতে বিদেশি বিনিয়োগ
কমে যাবে। ভারতে কর্মীদের বেতন হয়ে যাবে আমেরিকান কর্মীদের বেতনের সমান। পিছিয়ে
পড়া দেশগুলিতে মোটামুটি ভাবে ৩ হাজার টাকার বিনিময়ে যে শ্রম পাওয়া যায়, ভারতে তার জন্য ৭৫ হাজার
টাকা খরচ করতে রাজি হবে না কোনও সংস্থাই।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে- যে
সমস্ত দেশ আমদানিভিত্তিক, অর্থাৎ, আমদানির উপরেই যে সমস্ত দেশের অর্থনীতি নির্ভর করে, সেই দেশগুলিতে মুদ্রাকে
শক্তিশালী করে তোলাই সরকারের লক্ষ্য। কারণ, মুদ্রা শক্তিশালী হলে বিদেশ
থেকে সস্তায় জিনিস কেনা যায়। আর যে দেশগুলির অর্থনৈতিক পরিকাঠামো রফতানির উপর
দাঁড় করিয়ে রেখেছে, সে দেশের সরকার মুদ্রাকে দুর্বল করে রাখতে চায়। মুদ্রা
দুর্বল হলে দেশ থেকে পণ্য রফতানির মাধ্যমে বেশি টাকা আয় করা সম্ভব হয়। তবে ভারতে
আমদানি এবং রফতানির পরিসংখ্যান পাশাপাশি রেখে দেখা গিয়েছে, বিদেশে পণ্য বিক্রির চেয়ে
বিদেশ থেকে পণ্য কেনার পরিমাণই ভারতে বেশি। ফলে ভারতের মুদ্রা যত শক্তিশালী হবে, ততই লাভ এদেশের।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন