যে
কোন প্রবন্ধ লেখবার আগে বুঝে নিতে হয়, প্রবন্ধ
কীভাবে লিখতে হবে এবং তার বিষয়টাকে কেমন করে পরিবেশণ করতে হবে। নতুন লেখকদের দিকে
তাকিয়ে বঙ্কিমচন্দ্র লিখেছিলেন, ‘প্রাঞ্জলতা রচনার বড়ো গুণ। তুমি যাহা
লিখিবে, লোকে
পড়িবামাত্র যেন তাহা বুঝিতে পারে। যাহা লিখিলে, লোকে
যদি তাহা না বুঝিতে পারিল, তবে
লেখা বৃথা।
প্রবন্ধগুলিকে
সর্বদাই তিনটি ভাগে ভাগ করতে হয়, এর
প্রথমটি হল ভূমিকা। ভূমিকার পরে আলোচ্য বিষয়টি মাঝখানে রাখতে হবে। এখানে আলোচ্য
বিষয়টির বিচার-বিশ্লেষণের দরকার। বিতর্কিত বিষয় হলে বিতর্কে দু'পক্ষের কথাই সমানভাবে তুলে ধরতে হবে, নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ এই
প্রসঙ্গে খুবই জরুরি। তবে শেষ অংশে একটি যুক্তিগ্রাহ্য মতামত যাতে উপস্থাপিত করা
যায়, তা
দেখতে হবে। প্রবন্ধের সেটাই হবে উপসংহার। যে-কোনো প্রবন্ধেই এই তিনটি অংশ থাকা
বাঞ্ছনীয়। প্রথমে 'ভূমিকা', শেষে 'উপসংহার' এবং
মাঝে আলোচনার বিষয়গত উপস্থাপন।
‘প্রবন্ধ’নামটি আমাদের আর একটি ইঙ্গিত দেয়, সে ইঙ্গিত হল এর আকার এবং
সংহতি সম্পর্কে। আলোচনাকে সংহত করতে হলে অকারন বিস্তৃতি যাতে না হয়, তা অবশ্যই দেখতে হয়।
প্রকৃষ্ট' রূপে
'বন্ধন
না থাকলে প্রবন্ধের মর্যাদা কোনো লেখাই পায় না। তাই প্রবন্ধ লিখতে গিয়ে একটি
অকারণ কথাও যেন তার ভেতর আমরা না ঢোকাই। কেবল অকারণ কথাই নয়, অপ্রাসঙ্গিক
বিষয়ও সমানভাবে পরিহার করতে হবে। ধান ভানতে গিয়ে শিবের গীত যেন কখনও না হয়। ভুল
বানান, ভুল
তথ্য বা ভুল পরিসংখ্যান পরিবেশন যেন কোনোরকমেই প্রবন্ধে না যুক্ত করা হয়। আর
প্রবন্ধের আকার যেন সহজে পাঁচশো শব্দ পেরিয়ে না যায়। —এই আকার বন্ধনটাও খুব জরুরি।
এবার
আসছি অনুচ্ছেদ রচনা প্রসঙ্গে:-
অনুচ্ছেদ
হল কিছু বাক্যের সমষ্টি। এক বা একাধিক শব্দ একত্রিত হয়ে যখন মনের ভাব প্রকাশ করে
তখন তাকে বলা হয় বাক্য। আবার কয়েকটি বাক্য একত্রিত হয়ে যখন কোন বিষয় সম্পর্কে
একটি ধারণা সৃষ্টি করে তখন তা হয় অনুচ্ছেদ। যত কম বাক্য ব্যবহার করে একটি বিষয়
সম্পর্কে যখন সম্পূর্ণ ধারণা সৃষ্টি করা যাবে তখনই তা সার্থক অনুচ্ছেদ হিসেবে
পরিগণিত হবে। সুতরাং অন্য সব কাজের জন্য যেমন পূর্ব প্রস্তুতি বা পরিকল্পনার
প্রয়োজন হয় তেমনি অনুচ্ছেদ রচনার জন্যও পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে।
অনুচ্ছেদ
রচনার শুরুতেই মনে রাখতে হবে, যে
বিষয়টি সম্পর্কে অনুচ্ছেদ রচনা করা হচ্ছে তার মূলভাবটি যেন কোন ভাবেই ক্ষুণ্ণ না
হয়। বিষয়টি সম্পর্কে যথাসম্ভব বেশি ও নির্ভুল তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। অনুচ্ছেদে
ব্যবহৃত বাক্যগুলি যেন পরস্পরের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয়। একই শব্দ বা বাক্য বারবার
ব্যবহার করা ঠিক নয়। আবার ভাষা প্রয়োগের ক্ষেত্রেও যেন চলিত বা সাধু ভাষার
মিশ্রণ না ঘটে সেদিকেও নজর রাখা প্রয়োজন। যথাসম্ভব সহজ এবং কথ্য ভাষা ব্যবহার
করতে হবে। যত্ন নিতে হবে বানান এবং বিরাম চিহ্ন ব্যবহারের ক্ষেত্রে। উদ্ধৃতি
ব্যবহারের ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় সতর্ক থাকতে হবে, মনে
রাখতে হবে উদ্ধৃতিতে যেন কোনও রকম ত্রুটি না থাকে। অনুচ্ছেদের শুরু এবং শেষের
মধ্যে যাতে সামঞ্জস্য থাকে সেদিকেও প্রখর দৃষ্টি রাখতে হবে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন