রবিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৩

নর্তকীর প্রতি অবিচার, অভিশাপে শুকিয়ে যায় ফতেপুর সিক্রি

 ফতেপুর সিক্রি পরিত্যক্ত হবার কারণ

জাহাঙ্গীরের জন্মে আনন্দে আত্মহারা আকবর ফতেপুর সিক্রীতে ১৫৭১ খ্রীষ্টাব্দে তার সম্রাজ্যের নতুন রাজধানী তৈরী করেন। কিন্তু সেই রাজধানী আবার ১৪ বছরের মধ্যে পরিবর্তন করতে হয়েছিল আকবরকে-ই। আর একে নিয়েই যত জল্পনা।শোনা যায় জলকষ্টের জন্যই এই ফতেপুর সিক্রী ছেড় চলে যেতে হয়েছিল। কিন্তু এর সাথে আরো একটি ঘটনার কথা ইতিহাসের পাতা থেকে জানা যায়।

আকবর যখন এখানে রাজধানী স্থানান্তর করেন, তখন এর পরিচয় ছিল সিক্রি নামে একটি সাধারণ গ্রাম। ১৫৭৩ খ্রিস্টাব্দে গুজরাত জয়ের স্মারক হিসেবে এই নগরীর নাম আকবর রেখেছিলেন ফতেপুর সিক্রি অর্থাৎ জয়ের শহর। গুজরাত বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে এই নগরীতে তৈরি করেছিলেন বুলন্দ দরওয়াজা

৩ কিমি লম্বা, ১ কিমি চওড়া এই প্রাসাদনগরীকে তিন দিকে ঘিরে ছিল দুর্ভেদ্য ৮ কিমি লম্বা প্রাচীর। এক দিকে ছিল গভীর জলাশয়। প্রাসাদের উল্লেখযোগ্য অংশগুলি হল দেওয়ান-ই-খাস, দেওয়ান-ই-আম, ইবাদতখানা, নহবতখানা এবং বীরবল মহল। এখানকার সেলিম চিশতীর সমাধি এবং জামা মসজিদও পু্ণ্যার্থীদের কাছে প্রিয় গন্তব্য স্থান।

১৫৭১ থেকে ১৫৮৫ অবধি ফতেপুর সিক্রি ছিল মুঘলদের রাজধানী। রাজধানী স্থানান্তরিত হওয়ার পরেও কিছু দিন পর্যন্ত ফতেপুর সিক্রিতে মানুষ বসবাস করেছিল। ১৬১০ খ্রিস্টাব্দে সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত হয়ে যায় এই নগরী।

ফতেপুর সিক্রিতে সম্রাট আকবরের প্রিয় নর্তকী ছিলেন জারিনা। তাঁর জন্য ছিল নির্দিষ্ট মহল। কথিত, জারিনার এই উত্থানে আকবরের হারেমের বাকি নারীরা ঈর্ষাকাতর হয়ে পড়েন। তারা ষড়যন্ত্র করে জারিনাকে সম্রাটের সামনে চোর সাব্যস্ত করেন। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হন জারিনা। চুরির শাস্তি হিসেবে আকবর তাঁর দুটি হাত কেটে নেওয়ার শাস্তি দেন। এরপর অবশ্য ইতিহাসের পাতা থেকে উধাও হয়ে যান জারিনা। তিনি কি পালিয়ে যেতে পেরেছিলেন না তাঁর দুটি
হাত কাটা গিয়েছিল তা পরিষ্কার জানা যায় না।

এদিকে সন্তানের শোকে উন্মাদপ্রায় হয়ে যান জারিনার বাবা। আর তাঁর অভিশাপেই নাকি ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায় ফতেপুর নগরী ও তার সংলগ্ন এলাকা। তাই ফতেপুর সিক্রীতে জল শুকিয়ে যাওয়ার ঘটনা কতটা প্রকৃতিক তা বলা যায় না।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন