আজকের ভারত তথা পৃথিবীর উষ্ণতা ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে। কোথাও তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রী ছাপিয়ে যাচ্ছে আবার কোথাও-বা ৫০ ডিগ্রী তাপমাত্রা উঠছে। কিন্তু স্থান বিশেষে কোথাও ৪০ ডিগ্রী-তেই হচ্ছে মানুষের মৃত্যু আবার কোথাও ৫০ ডিগ্রীতেও মানুষ রয়েছে স্বাভাবিক। কিন্তু এখন প্রশ্ন হল - এমনটা হয় কেন? তারই উত্তর খুঁজবো এই ভিডিওতে।
ভারত গ্রীষ্মপ্রধান দেশ। তর্কের খাতিরে হলেও
এখানে তাপের প্রাবল্য মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু বিশ্বের সার্বিক পরিস্থিতির দিকে
চোখ রাখলে দেখা যাচ্ছে, অনেক
নাতিশীতোষ্ণ কিংবা শীতপ্রধান দেশেও এ বছর গরম-এর মাত্রা ছাড়িয়েছে। আর সেই সব
দেশে গরমের সামন্য প্রবল্যতেই মানুষ হচ্ছে অসুস্থ। আবার এবছরে অর্থাৎ ২০২৩ সালে সময়ের
অনেক আগেই চলে এসেছে গ্রীষ্মকাল।
তবে ভারতের রাজস্থানের থর মরুভূমিতে গ্রীষ্মের
তাপমাত্রা বরাবরই একটু বেশি থাকে। গ্রীষ্মকালে সেখানে গড় তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি
সেলসিয়াস হলেও প্রায়ই তা ছাপিয়ে যায় ৪০ ডিগ্রির গণ্ডি। ২০১৬ সালে থর মরুভূমির
সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পারদ উঠেছিল ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। পরিসংখ্যান বলছে, আফ্রিকার সাহারা মরুভূমিতে
এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পৌঁছেছে ৫৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। কিন্তু ৫১ হোক বা
৫৮, কোনও
ক্ষেত্রেই তেমন প্রাণহানির কোন খবর নেই। অথচ, এই
তীব্র গরম কলকাতা কিংবা দিল্লিতে অনায়াসে ডেকে আনতে পারে মৃত্যু। পশ্চিমবঙ্গে গত
কয়েক দিনের তাপপ্রবাহে ৪১ কিংবা ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রাতেই একাধিক মৃত্যুর খবর
এসেছে।
মরুভূমিতে অতিরিক্ত উষ্ণতায়ও মৃত্যু নেই কিন্তু
সমভূমিতে তার চেয়ে কম উষ্ণতায় হচ্ছে মৃত্যু। এর নেপথ্যে রয়েছে বিজ্ঞানের কিছু
অকাট্য যুক্তি।
কোন অবস্থানে তাপের কেমন প্রভাব পড়বে, তা নির্ভর করে একাধিক বিষয়ের
উপর। আর্দ্রতা এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে। মানুষের শরীর তাপ পায় মূলত সূর্য
থেকে। এছাড়া শরীরের অভ্যন্তরীণ কিছু বিষয়, শারীরিক
ক্রিয়া থেকে তাপ উৎপন্ন হয়ে থাকে। শরীর থেকে অতিরিক্ত তাপ বাইরে বার করে দেওয়াও
প্রয়োজন। ঘামের মাধ্যমে যে কাজ সম্পূর্ণ হয়। ঘাম বাতাসে মিশে গিয়ে শরীর ঠান্ডা
করে।কিন্তু বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতা বেশি থাকলে ঘাম বাষ্পীভূত হতে পারে না। কারণ
অধিক আর্দ্রতার অর্থ হল, বাতাস
আগে থেকেই জলীয় বাষ্পে পূর্ণ রয়েছে। ফলে আর্দ্রতার কারণে অধিক তাপমাত্রায়
মাত্রাতিরিক্ত ঘাম হয়।
ঘাম শরীর থেকে সমস্ত শক্তি শুষে নেয়। এর ফলে
মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। নিরক্ষীয় অঞ্চলে তাপের কারণে মৃত্যুর অন্যতম
কারণ এটাই। সম্প্রতি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তাপের এই প্রাণঘাতী প্রভাব
দেখা গিয়েছে।অন্য দিকে, মরুভূমি
বা অপেক্ষাকৃত শুষ্ক এলাকার বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ অনেক কম থাকে। মরুভূমির
বাতাসে জলীয় বাষ্প প্রায় থাকে না বললেই চলে। তাই সেখানে তাপমাত্রার পারদ চড়লেও
বাসিন্দাদের শরীরে ঘাম হয় কম। শুকনো গরমে সমস্যা হয় ঠিকই, কিন্তু তা থেকে মৃত্যুর নজির
কম।
এছাড়া মরুভূমি সংলগ্ন এলাকায় যাঁরা বসবাস করেন, তাঁদের শরীর উচ্চ তাপমাত্রা
সহ্য করার জন্য প্রস্তুত হয়েই থাকে। বছরের বেশির ভাগ সময়েই তাঁরা রয়েছেন রোদ আর
তীব্র গরমের মাঝে। শরীর তার জন্য প্রস্তুত থাকে।কিন্তু নিরক্ষীয় অঞ্চলের
বাসিন্দাদের শরীরে তাপ সহনের ক্ষমতা তুলনামূলক কম থাকে। বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে
ইদানীং বিভিন্ন দেশে তাপমাত্রা অতীতের নজির ছাপিয়ে গেছে। ফলে আকস্মিক আবহাওয়ার
এমন পরিবর্তন সহ্য করতে না পেরে মৃত্যু হচ্ছে অনেকের।
উপরুক্ত কারণগুলির জন্যই মরুভূমিতে তাপ সহ্য
করে দিব্যি দিন কাটিয়ে দেওয়া যায়,কিন্তু
আর্দ্রতার কারণে অন্যান্য অঞ্চলে ওই একই তাপমাত্রা হয়ে ওঠে প্রাণঘাতী।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন