বৃহস্পতিবার, ১৫ জুন, ২০২৩

ভারতে প্রথম ইংরেজিতে দূরদর্শনে সংবাদ পাঠ করেছিলেন এই খ্যাতনামা মহিলা

সত্তরের দশকে প্রথম বার দেশে ইংরেজিতে খবর সম্প্রচার শুরু হয়। পরনে শাড়ি, মাথায় ছোট চুল- এমন বেশে ক্যামেরার সামনে ইংরাজিতে সংবাদ পাঠ করা কয়েক জন মহিলা সাংবাদিকদের মধ্যে যিনি রাতারাতি জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন তিনি গীতাঞ্জলি আইয়ার।

গত ৭ই জুন ২০২৩,  দিল্লিতে নিজের বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন গীতাঞ্জলি।তাঁর বয়স হয়েছিল ৭১। তাঁর প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সাংবাদিক মহলে। তাঁর এক পুত্র এবং এক কন্যাসন্তান রয়েছে। পুত্রের নাম শেখর এবং কন্যা পল্লবীও এক জন পুরস্কারজয়ী সাংবাদিক।

ভারতীয় দূরদর্শনে যাঁরা প্রথম ইংরেজিতে সংবাদ পাঠ করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন গীতাঞ্জলি। অল্প দিনের মধ্যেই সেই সময় সংবাদ পাঠিকা হিসাবে ঘরে ঘরে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন তিনি। ১৯৭১ সালে দূরদর্শনে যোগ দিয়েছিলেন গীতাঞ্জলি। সেই তাঁর পথচলা শুরু। তারপর তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে দূরদর্শনে দাপিয়ে কাজ করেছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে অবশ্য কলকাতার যোগ রয়েছে। মহানগরের লরেটো কলেজ থেকে স্নাতক হয়েছিলেন তিনি। তার পরেই যোগ দেন দূরদর্শনে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানাচ্ছে, সেই সময় রেডিয়োতে সুরজিৎ সেন, পামেলা সিংহদের সংবাদ পাঠ শুনে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন গীতাঞ্জলি। তাঁদের দ্বারাই প্রভাবিত হয়ে পরে সংবাদ পাঠিকা হিসাবে নিজেকে মেলে ধরেন তিনি। সত্তরের দশকে দেশ জুড়ে তাঁর অনুরাগীর সংখ্যা ছিল অনেক। এমনকি, অনেকেই টিভিতে তাঁকে দেখার জন্যই খবর দেখতেন।দূরদর্শনে কাজ করার সময় গীতাঞ্জলির জনপ্রিয়তা যে কোনও সিনেমার তারকার থেকে কম ছিল না। স্ক্রল জানাচ্ছে, এক বার দেহরাদূনে অটোয় চড়েছিলেন গীতাঞ্জলি। কিন্তু অটোচালক তাঁর কাছ থেকে ভাড়া নিতে চাননি।

সেই সময় এত উন্নত প্রযুক্তি ছিল না। ক্যামেরার সামনে সংবাদ পাঠ করা রীতিমতো চ্যালেঞ্জ-এর বিষয় ছিল সংবাদ পাঠিকাদের। এক সাক্ষাৎকারে গীতাঞ্জলি বলেছিলেন, ‘‘আমাদের কাছে টেলিপ্রম্পটার ছিল না। ক্যামেরার পাশে এক জন সংবাদ লেখা কাগজ নিয়ে আমাদের জন্য দাঁড়াতেন। সেই কাগজে লেখা খবর দেখে পড়তে হত ক্যামেরার সামনে। একসঙ্গে ওই স্ক্রিপ্ট দেখা আর ক্যামেরার দিকে তাকানো খুব কঠিন ব্যাপার ছিল।’’ জনপ্রিয় সংবাদ পাঠিকা হিসাবে বেশ কিছু পুরস্কারও পেয়েছেন গীতাঞ্জলি। ৪ বার সেরা সংবাদ পাঠিকার পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। ১৯৮৯ সালে ইন্দিরা গান্ধী প্রিয়দর্শিনী পুরস্কারে সম্মানিত হন গীতাঞ্জলি।

এছাড়া তিনি অভিনয়ও করেছিলেন। দূরদর্শনে খানদান নামে একটি টিভি সিরিয়ালে তিনি অভিনয়  করেছিলেন।২০০২ সালের অগস্ট মাসে দূরদর্শন ছাড়েন গীতাঞ্জলি। তার পর যোগ দেন কর্পোরেট কমিউনিকেশন, মার্কেটিং পেশায়। কাজ করেছেন সিআইআই, ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ডে।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন