তাই এই ভবনে ভূত না থকা-টাই অস্বাভাবিক। সারা
দিনে অসংখ্য লোকের আনাগোনায় হাইকোর্ট জমজমাট হয়ে থাকলেও, সন্ধ্যে নামলেই এই এলাকা হয়
পড়ে একেবারে নিশুতপুরী। কলিকাতার ভূত বিশ্বাসী লোকেদের কাছে ভুতুড়ে বাড়ির তালিকায়
বেশ উপরের দিকেই রয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট ভবন।
এই ভবনের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে নানা গল্প।
তবে সবচেয়ে ভূতুড়ে বলে যে জায়গাটি পরিচিত তা হল হাইকোর্ট-এর ১১ নম্বর রুম। আর এটি
ভৌতিক হবার পেছনে রয়েছে ইতিহাস। ব্রিটিশ আমলে হাইকোর্ট চালু হওয়ার পর দ্বিতীয় তলের
এই আদালত কক্ষেই বিচারপতির রায়ে ফাঁসির দড়িতে ঝুলেছেন বহু আসামি। তাঁদের মধ্যে
যেমন অগ্নিযুগের বিপ্লবীরা রয়েছেন, তেমন
অনেক কুখ্যাত সব দুষ্কৃতীও রয়েছে। ফলে সেখানে ভূতের আখড়া না হওয়াই অস্বাভাবিক।
অবশ্য ওই কক্ষটির অন্য বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। কক্ষের ভিতরে ঢুকলে দেখা যাবে, ইংরেজ আমলের কাঠের আসবাবপত্র।
সেগুলি সব কালো রং করা। শুধুমাত্র ওই কক্ষেই রয়েছে ১০টি দরজা। তার মধ্যে এখন
ব্যবহার হয় মাত্র দু’টি।
একটি দিয়ে বিচারপতিরা প্রবেশ করেন এবং অন্যটি আইনজীবী-সহ সাধারণের ব্যবহারের জন্য
খোলা। এছাড়া ওই কক্ষের বেশির ভাগ অংশ জুড়ে রয়েছে একটি কালো রঙের বিশাল কাঠগড়া।
যেখানে আসামিদের তোলা হত। তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার, এই
কাঠগড়ার মাঝখানে রয়েছে একটি সুড়ঙ্গ। শোনা যায়, কুখ্যাত
দুষ্কৃতীদের মূল প্রবেশ পথ দিয়ে কোর্টে আনা হত না। নীচতলা থেকে সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে
তাদের সরাসরি আদালতে হাজির করানো হত।
বেশ কয়েক বছর আগে ওই কক্ষের বাইরে নিরাপত্তার
জন্য দিনরাত পুলিশ মোতায়েন থাকত। সেই সময় একবার এক পুলিশকর্মী ভূত দেখেছিলেন বলে
দাবি করেন। রাত ৮টা নাগাদ তাঁর প্রচণ্ড জ্বর আসে। তারপর ঐ রুমের বাইরে থাকা একটি বেঞ্চে তিনি শুয়ে পড়েন
বিশ্রাম নেওয়ার জন্য। কিছুক্ষণ পর চোখ ঘুরিয়ে তিনি দেখেন, তার মাথার সামনেই বসে রয়েছেন
কয়েদির পোশাক পরা এক ব্যক্তি। জ্বরের ঘোরে ভুল দেখছেন ভেবে ভালো করে লক্ষ্য
করলেন।ঘোর কাটতেই তিনি বুঝলেন তার সামনে ভূত বসে রয়েছে। এরপর কোনও মতে দৌড়ে তিনি
নীচে নামেন। শোনা যায়, তারপর থেকে নাকি রাতেরবেলায়
সেই কক্ষের বাইরে পুলিশ পাহারা উঠে গিয়েছে।
তবে মজার ব্যাপার হল, কলকাতা হাই কোর্টে শুধু যে
আসামিদের ভূত রয়েছে এমন নয়। শোনা যায়, অনেক
সাহেব আইনজীবী ও বিচারপতির ভূতও রয়েছে হাইকোর্টে চত্তরে। বর্তমানে কলকাতা
হাইকোর্টের যেটি ১ নম্বর কোর্ট চত্বর, সেখানে
ঘোরাফেরা করে সাহেবদের ভূত। ওই বারান্দায় সারি দেওয়া রয়েছে হাইকোর্টের প্রাক্তন
বিশিষ্ট বিচারপতিদের মূর্তি। হাই কোর্টে চা দেন, এমন
এক কর্মীর দাবি, রাতে
বিচারপতির পোশাক পরা অনেক সাহেবকেই নাকি বেড়াতে দেখা যায় ওই বারান্দায়।
তবে এই হাইকোর্টকে নিয়ে আরো একটি ভৌতিক ঘটনার
কথা প্রচলিত আছে। আর সেটি হাইকোর্টের বারান্দাকে ঘিরে। নিস্তার রাউত ছিলেন এক জন
যৌনকর্মী। যিনি শালিখরাম নামে এক জন ব্যবসায়ীর প্রেমে পড়েছিলেন। তিনি এই কাজের
কলঙ্ক থেকে দূরে সরে গিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করতে চেয়েছিলেন। যৌনকর্মীদের খাতা
থেকে তাঁর নাম মুছে ফেলার জন্য কলকাতা হাইকোর্টে আবেদনও করেছিলেন। কিন্তু সেই
আর্জি অস্বীকার করা হয়েছিল। কয়েক দিন পর পুলিশ নিস্তারের মৃতদেহ পায়। উদ্ধার
হয়েছিল তাঁর শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করা অবস্থায়। নগ্ন শরীরে কাপড়ের চিহ্নটুকু
ছিল না, পায়ে
ছিল কেবল নূপুর। কলকাতা হাইকোর্টের দীর্ঘ অন্ধকার বারান্দায় এখনও নাকি শোনা যায়
তাঁর নূপুরের ছনছন শব্দ।
সব শেষে একটি কথা ভূত আছে কি নেই তা নিয়ে বহু
বিতর্ক থাকবে, আর
কলকাতা হাইকোর্টে ভূত আছে এ নিয়ে বহু তর্ক আমাদের চলবে, কিন্তু বিচারব্যবস্থায়
বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ বাসীর আশার আলো যোগায় এই হাইকোর্ট।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন