মেয়েদের এদেশে সুযোগ-সুবিধা একটু কম থাকে। তাও
আবার যদি ক্যানসারের রুগী হন তাহলে সেই সুযোগ আরো কমে যায়। তবুও সেই সব বেড়াজাল
কাটিয়ে এবং নিজের দৃঢ়তাই তাঁকে ব্যাবসায়িক জগতে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আরো একটি বিষয়
হল ইনি পড়াশোনা কোনও আইআইটি কিংবা আইআইএম থেকে করেননি। সাধারণ কলেজ থেকে পড়াশোনা
শেষ করেই উন্নতির শীর্ষে পৌঁছেছেন তিনি।
ইনি হলেন কণিকা তেকরিওয়াল। যিনি ভারতের অন্যতম
সফল ব্যবসায়ী এবং ‘ফিনানশিয়াল
এক্সপ্রেস’-এর
প্রতিবেদন অনুযায়ী ৪২০ কোটি টাকার মালিক। ব্যবসা শুরুর মাত্র কয়েক বছরেই দেশের অন্যতম
সফল ব্যবসায়ী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছিলেন কণিকা। ভারতে একমাত্র এনার কাছেই
রয়েছে সবচেয় বেশী বিলাসবহুল বিমান। যা তিনি ভাড়া দেন। আসলে কণিকা একটি বেসরকারি
ভ্রমণ সংস্থার মালিক। ২০১২ সালে এই ভ্রমণ সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন কণিকা। সেই সময়
তাঁর বয়স ছিল ২২।
কণিকার এই স্টার্টআপ সংস্থা ঘুরতে যাওয়ার জন্য
প্রমোদ বিমান অর্থাৎ চার্টার্ড প্লেন এবং হেলিকপ্টার ভাড়া দেয়। সংবাদমাধ্যমের
প্রতিবেদন অনুযায়ী, কণিকার
সংস্থার কাছে এই ধরনের ১০টি চার্টার্ড বিমান রয়েছে। এটিই ভারতের প্রথম ভ্রমণ
সংস্থা, যে
ঘুরতে যাওয়ার জন্য চ্যাটার্ড বিমান ভাড়া দেয়। দেশের অনেক ধনী ব্যক্তি বিদেশে
ঘুরতে যাওয়ার জন্য তাঁর সংস্থার দ্বারস্থ হন বলে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ
রয়েছে। কণিকার ভ্রমণ সংস্থা দেশে প্রমোদ বিমানযাত্রায় ‘বিপ্লব’ এনেছে বলেও অনেকের অভিমত।
বর্তমানে সফল হলেও কণিকার যাত্রাপথ মোটেও সহজ
ছিল না। খুব কম বয়সেই তাঁর শরীরে ক্যানসার বাসা বাঁধে। তবে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর সেই
মারণরোগকে হারিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরেন তিনি। কণিকার জন্ম মধ্যপ্রদেশের ভোপালের
একটি মাড়োয়ারি পরিবারে। ভোপালের জওহরলাল নেহরু সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুল থেকে
পড়াশোনা শেষ করেন কণিকা। এর পর উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি লন্ডনের কভেন্ট্রি
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
কণিকা এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘চার্টার্ড
বিমান নিয়ে ব্যবসার কথা আমার মাথায় প্রায় তিন-চার বছর ধরে ঘুরছিল। কিন্তু যখন
আমি এটি নিয়ে কাজ শুরু করি, তখন
আমার ক্যানসার ধরা পড়ে। ফলে আমার কাজও পিছিয়ে যায়। তবে আমি ভাগ্যবতী যে আমি
সুস্থ হওয়ার আগে এই নিয়ে আর কেউ কাজ করার কথা ভাবতে পারেনি।’’
হায়দরাবাদের ব্যবসায়ী পি শরৎচন্দ্র রেড্ডিকে
বিয়ে করেছেন কণিকা। ব্যবসায়ী হিসাবে সফল হওয়ার পর থেকে দেশে-বিদেশে একাধিক
পুরস্কার এবং স্বীকৃতিও পেয়েছেন তিনি। ৩৩ বছর বয়সী এই ব্যবসায়ী, তাঁর ব্যবসায়িক দক্ষতার জেরে
কেন্দ্রীয় সরকার প্রদত্ত জাতীয় উদ্যোক্তা পুরস্কার অর্থাৎ ন্যাশনাল
অন্ট্রোপেনিয়রশিপ অ্যাওয়ার্ড এবং ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘ইয়ং গ্লোবাল লিডার’ পুরস্কার-সহ বেশ কয়েকটি পুরস্কার এবং সম্মান
জিতেছেন। ভারতীয় উদ্যোগপতি মহলে কণিকা পরিচিত ‘দ্য স্কাই কুইন’ নামে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন