জুন মাসে ভারতে রেল দুর্ঘটনার ইতিহাসে
ভারতে দুর্ঘটনার ইতিহাসে রেলের নাম যেন কোন
ভাবেই পিছু ছাড়ছে না। গত চার বছরে সরকারি ভাবে রেল দ্বারা ঘোষিত দুর্ঘটনার সংখ্যা
হল দুই হাজারের বেশি। যদিও গত শুক্রবারের মত ভয়াবহ দুর্ঘটনা ছিল না সেগুলি, তাই খবরের পাতায় আমরা
তেমনভাবে সেগুলিকে দেখতে পাইনি। তবে ২রা জুন ২০২৩, অর্থাৎ গত শুক্রবারে ওড়িশার
ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা আজ থেকে ৪২বছর আগে ঘটে যাওয়া বিহারের রেল দুর্ঘটনার স্মৃতিকে
উস্কে দিল। আরো একটা অদ্ভুত ব্যাপার হল সেই দুর্ঘটনাও ঘটেছিল ঠিক জুন মাসে। ১৯৮১
সালের জুন মাসের সেই রেল দুর্ঘটনার সঠিক কারণ কিন্তু আজও জানা যায়নি। এই দুর্ঘটনায়
৭৫০ জন যাত্রীর মৃত্যু হয়েছিল। যদিও সরকারি মতে মৃত্যু হয়েছিল ২৫০ জনের। আরও এই
দুর্ঘটনায় বহু মানুষের নিথর দেহটি কিন্তু খুঁজে পাওয়া যায়নি।
১৯৮১ সালের ৬ জুন, ৮০০-র বেশি যাত্রী নিয়ে
বিহারের মানসি থেকে সহরসার দিকে যাচ্ছিল একটি প্যাসেঞ্জার ট্রেন। মাঝপথে দুর্ঘটনার
কবলে পড়ে সেটি। এক্ষেত্রেও প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি করমণ্ডলের মতো লাইনচ্যুত হয়।
একাধিক কামরা মূল ট্রেন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কিন্তু এই ট্রেন দুর্ঘটনার
পরিস্থিতি এবং প্রেক্ষাপট ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।
বিহারের ১৯৮১ সালের সেই ট্রেন দুর্ঘটনাকে
ভারতের রেল দুর্ঘটনার ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী এবং মর্মান্তিক বলে দাবি করেছিলেন
অনেকে।জানা যায়, মানসি
থেকে সহরসার দিকে যাওয়ার পথে বিহারের বাগমতি নদীর উপর দিয়ে যাচ্ছিল ট্রেনটি। নদীর
উপরে রেলসেতু পেরোনোর সময় দুর্ঘটনাটি ঘটে।ট্রেনের একাধিক কামরা ইঞ্জিন থেকে
বিচ্ছিন্ন হয়ে লাইনচ্যুত হয়। সেতুর উপর থেকে যাত্রিবাহী কামরাগুলি সোজা গিয়ে পড়ে
নদীতে। নদীর জলে সেগুলি ডুবে গিয়েছিল।৪২ বছর আগেকার এই দুর্ঘটনার খুঁটিনাটি তথ্য
প্রকাশ্যে আসেনি। নিশ্চিত করে জানা যায়নি দুর্ঘটনার কারণও। তবে কী ভাবে ট্রেনটি দুর্ঘটনার
কবলে পড়ে, সে
সম্বন্ধে একাধিক তত্ত্ব উঠে আসে।
অনেকে বলেন, ট্রেনটি
আসলে ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়েছিল। কারণ ৬ই জুন ওই এলাকায় প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। সেই
সঙ্গে ছিল ঝোড়ো হাওয়ার দাপট। দমকা হাওয়ার ধাক্কায় চালক নিয়ন্ত্রণ হারান। ফলে
রেলসেতুর উপর দিয়ে যাওয়ার সময় আচমকা চালক ব্রেক কষেণ বলে দাবি। তার পরেই কামরাগুলি
ছিটকে নদীতে পড়ে। বৃষ্টি এবং ঝড়ের প্রাবল্যে বাগমতি নদীও তখন উত্তাল। জল
ফুলেফেঁপে উঠেছিল। ফুঁসতে থাকা সেই নদীতে কার্যত সলিলসমাধি হয় যাত্রীদের। আবার
অনেকে বলেন,
ঘুর্ণিঝড় নয় বৃষ্টিতে দৃশ্যমানতা হারিয়ে চালক
সেতুর উপর হঠাৎ ব্রেক কষেণ।অনেকে মানুষ মনে করেন, সেতুর
উপরে একটি গরু চলে এসেছিল। সেই কারণে চালক আচমকা ব্রেক কষতে বাধ্য হন।দুর্ঘটনার আর
এক সম্ভাব্য কারণ হিসাবে উঠে আসে বন্যা। প্রবল বৃষ্টিতে রেলসেতু ভেসে গিয়েছিল বলে
মনে করা হয়। বাগমতি নদীর জল নাকি সেতুর উপরে উঠে এসেছিল। ফলে চালক সমস্যায় পড়েন।
উদ্ধারকাজ শেষ হতে সময় লেগেছিল ৬ দিন। এই
উদ্ধারকাজ একেবারেই সহজ ছিল না। ফলে যাত্রীদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনাও ছিল অত্যন্ত
ক্ষীণ। তবে সরকারি হিসাব বলছে, ৮৮
জন দুর্ঘটনার কবলে পড়েও বেঁচে ফিরেছিলেন।ঘূর্ণিঝড়ের কারণে উদ্ধারকাজ শুরু হতে
দেরি হয়েছিল। বহু মানুষের কোনও খোঁজই পাওয়া যায়নি। জলের তোড়ে কে কোথায় ভেসে
গিয়েছেন, কেউ
জানে না। অনেকে ট্রেনের সঙ্গেই নদীতে ডুবে গিয়েছিলেন।তবে মানসি থেকে ট্রেনটি যখন
রওনা দিয়েছিল তখন নাকি আবহাওয়া ভাল ছিল বলেই দাবি করা হয়। মাঝপথে আচমকা ঝড় ওঠে।
এই দুর্ঘটনা রেলের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ স্মৃতি হিসাবে রয়ে গিয়েছে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন