ক্যারিবিয়ান সাগরের অ্যান্টিলিস দ্বীপপুঞ্জের হিস্পানিওলা
দ্বীপে, কিউবা
ও জামাইকার পূর্বে, এবং
বাহামা, তুর্কস
ও কাইকোস দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণে অবস্থিত "রিপাপলিকান অফ হাইতি" দেশকে
বিশ্বের অন্যতম আমেরিকান মহাদেশের গরিব দেশ হিসাবে গণ্য করা হয়। এই হিস্পানিওলা
দ্বীপের একটা অংশে হাইতি দেশ এবং বাকি
বৃহত্তম একটা অংশে রয়েছে ডমিনিকান রিপাবলিক দেশ। সবচেয়ে অদ্ভুত বিষয় হল
ডমিনিকান রিপাবলিক হল একটি সচ্ছল ঠিকঠাক অর্থ সম্পন্ন দেশ। অন্যদিকে হাইতি হল
বিশ্বের সবচেয়ে গরীব দেশ। সুতরাং হিস্পানিওলা দ্বীপের একটা অংশ বেশ সচ্ছল কিন্তু
আর একটা অংশ রয়েছে বেশ দুর্দশায় পরিপূর্ণ। ছোট এই দেশের বাসিন্দাদের একাংশ এতটাই
গরিব যে, অনেক
সময় কাদা দিয়ে তৈরি রুটি খেয়েও তাঁরা দিন কাটান।
ক্যারিবিয়ান সাগরের বুকে এই দ্বীপরাষ্ট্রের
আয়তন মাত্র ২৭,৭৫০
বর্গ কিমি। মোট জনসংখ্যা ১ কোটি ২০ লক্ষের কাছাকাছি।হাইতির অন্যতম গরিব এলাকা
শার্লিন ডুমাস। এই বস্তি এলাকার মানুষ দুপুরের খাবার হিসাবে সাধারণত এই বিশেষ
কাদার রুটি খেয়ে থাকেন।মূল্যবৃদ্ধির কারণে হাইতির অনেক মানুষের এক বেলার খাবার
জোটানোরও ক্ষমতা নেই। তাই তাঁরা পেট ভরানোর তাগিদে এই রুটিকেই অবলম্বন করে
নিয়েছেন।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ক্যারিবিয়ান সাগরের
দ্বীপরাষ্ট্রগুলিতে গত দুই দশকে খাবারের দাম প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়েছে। ২০০৭ সালে
হওয়া ঘূর্ণিঝড় এবং ২০১০ সালে হওয়া ভূমিকম্পের কারণে রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফে হাইতিতে
জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই পরিস্থিতি থেকে এখনও ঠিক ভাবে বেরিয়ে আসতে
পারেনি এই দেশ। আর সেই কারণে এখনও নাকি সে দেশের বহু মানুষ বেঁচে থাকার জন্য কাদার
তৈরি রুটির উপর নির্ভর করে রয়েছেন।
তবে শুনলে অবাক হতে হয় যে, কাদার রুটি তৈরি করতে যে মাটি
লাগে, তা
নিয়েও রীতিমতো ব্যবসা ফেঁদে বসেছে হাইতির এক দল মানুষ। হাইতিতে যে কাদা দিয়ে রুটি
তৈরি হয়, তা
নিয়ে আসা হয় হিনচে শহর থেকে। বিক্রি হয় ‘লা স্যালাইন’ বাজারে। বাজারের শাকসব্জি এবং মাংসের পাশাপাশি
বিক্রি হয় এই মাটিও।
প্রথমে বাজার থেকে সেই শুকনো মাটি কিনে আনা হয়।
মাটি গুঁড়ো করে সেখান থেকে বাদ দেওয়া হয় নুড়ি-পাথর। এরপর সেই মাটিকে আরও মিহি
করে গুঁড়ো করে তা জলে ভিজিয়ে কাদার মণ্ড তৈরি হয়। এরপর কাদার ওই মণ্ডে নুন এবং
মশলা মিশিয়ে রুটির মতো গোল করে বেলে নেওয়া হয়। গোলাকৃতি কাদার রুটি তৈরি হয়ে গেলে
তা শুকোনোর জন্য রোদে ফেলে রাখা হয়।
কাদার রুটি রোদে দু’-তিন দিন শুকিয়ে নেওয়ার পর তা খাওয়ার জন্য
নিয়ে আসা হয়। অনেক সময় তা বাজারেও বিক্রি করা হয়। তবে খুবই সামান্য মূল্যে।হাইতির
বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, শুধুমাত্র
কম দামের জন্য নয়, ‘পুষ্টিগুণের’ জন্যও তাঁরা কাদার রুটি খেতে পছন্দ করেন।
হাইতির অন্তঃসত্ত্বা মহিলা এবং শিশুদের জন্য
কাদার রুটি অত্যন্ত উপকারী বলে মনে করা হয়। স্থানীয়দের বিশ্বাস, কাদার রুটি অন্তঃসত্ত্বা
মহিলা এবং শিশুদের শরীরে অ্যান্টাসিড এবং ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূর্ণ করে।
অন্তঃসত্ত্বা মহিলারা এই রুটি খেলে সন্তানরা স্বাস্থ্যবান হবে বলেও প্রচলিত রয়েছে
সে দেশে।
যদিও চিকিৎসকদের মতে, হাইতিবাসীদের এই ধারণা ভ্রান্ত।
কাদার রুটি খেলে উপকারের থেকে অপকার বেশি বলেই মত চিকিৎসকদের।চিকিৎসকদের মতে, দিনের পর দিন কাদার রুটি খেলে
দাঁতের ক্ষয়, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট ব্যথা-সহ একাধিক শারীরিক
সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটির ইমিউনোলজির
অধ্যাপক জেরাল্ড এন ক্যালাহানের মতে, কাদার
রুটিতে মারাত্মক পরজীবী এবং বিষাক্ত পদার্থ থাকতে পারে। তবে এটি গর্ভের ভ্রূণের
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও বাড়িয়ে দিতে পারে বলে দাবি করেছেন তিনি। সংবাদমাধ্যমের
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিস্বাদ
এই রুটি খাওয়ার পরই তা মুখের সমস্ত আর্দ্রতা শুষে নেয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেই স্বাদ অনুভব করা যায়।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন