"অতি দীন ও আশক্ত ব্যক্তিরাই দৈবের দোহাই দিয়ে
থাকে।"
যারা
অক্ষমতা ও দীনতায় ভোগেন তারাই তাদের সেই অক্ষমতা ও দীনতাকে ঢাকবার জন্য অদৃষ্ট বা
দৈবের উপর দোষারোপ করেন।
আমরা
জানি, Life is nothing, but a struggle for
existence। অর্থাৎ
জীবন আর কিছুই নয়, টিকে
থাকার জন্য সংগ্রাম। নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে, জীবনের
উত্থান-পতন ও চড়াই-উৎরাই-এর মধ্য দিয়ে জীবনকে সঠিকভাবে উপলব্ধি করার মধ্যেই থাকে
যথার্থ আনন্দ। কিন্তু যারা আশক্ত ও অক্ষম এবং মানসিকভাবে যারা দীন তারা জীবনের
মূলমন্ত্র জানেন না। তাই তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে এবং তখনই তারা দৈবের দোহাই
দিতে থাকেন। রবীন্দ্রনাথ তাই 'শিক্ষার
মিলন' প্রবন্ধে
বলেছিলেন-আমি একদিন একটি গ্রামের উন্নতি করতে গিয়েছিলাম। গ্রামের লোককে জিজ্ঞাসা
করলুম, 'সেদিন
তোদের পাড়ায় আগুন লাগল, একখানা
চালাও বাঁচাতে পারলি না কেন?' তারা
বললে, 'কপাল'। সুতরাং আগুন নেভাতে না পারার অক্ষমতাকে
যারা 'কপাল' মনে করেন, তারা আর যাই হোক্ অন্তত
সংগ্রামী মানসিকতাসম্পন্ন নয়। জীবনের বৃহত্তর কর্মযজ্ঞের দিকে তাকালে দেখা যায়-
যারা পৃথিবীতে নানা কাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করছে, পেয়েছে
প্রশংসার বরমাল্য, তাদের
অগ্রগতির মূলধন 'দৈব
নয়, পুরুষকার, পরনির্ভরশীলতা নয়, আত্মবিশ্বাস'। মানুষ তার নিজের ভাগ্য নিজেই তৈরী করে।
নিজেকে
ভাগ্যকর্তা মনে করে নিয়ে নিজের আত্মাবিশ্বাসের দ্বারা নিষ্ঠা ও পরিত্রাণের মাধ্যমে
মানুষ উন্নতি সোপানে পৌঁছে যেতে পারে। কিন্তু যারা ভীরু ও আত্মশক্তিতে বলীয়ান নয়
তারা কর্মবিমুখ হয়ে আদর্শচ্যুত হয় ও অদৃষ্ট বা নিয়তিকে মেনে নেয়। জীবনে প্রতিষ্ঠা
দৈবধন ভেবে তারা কালের হাতে নিষ্ক্রিয় পুতুল হয়ে ওঠে এবং তা প্রকৃত মানুষের লক্ষণ
নয়, জাতি ও জাতীয় উন্নতির
পক্ষে এই ধরনের দীন ও অশক্ত ব্যক্তিরা অন্তরায়স্বরূপ।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন