কলকাতার ভুতুড়ে এলাকা
৬) কলকাতা রেস কোর্স ময়দান: কথিত
আছে, যে শনিবার পূর্ণিমা পড়ে, সেই রাতে একটি সাদা ঘোড়ার ভূতকে নাকি কলকাতা
রেস কোর্স জুড়ে ছুটতে দেখা যায়। প্রাইড নামে ঘোড়াটি আদতে ছিল এক ব্রিটিশ
সাহেবের। ব্রিটিশ আমলে নাকি ‘উইলিয়াম
সাহেবের সাদা ঘোড়া’-র
বেশ পরিচিতিও ছিল। প্রাইড যখন রয়্যাল ক্যালকাটা টার্ফ ক্লাবে ডার্বিতে হেরে যায়, তখন উইলিয়ামস নাকি রাগের মাথায় তাঁকে খুন
করেন। সেই ঘোড়ারই দেখা মেলে রেস কোর্সের মাঠে।
৭) রবীন্দ্র সরোবর মেট্রো স্টেশন: এক
সময়ে নাকি বেশ কিছু ভয়াবহ ঘটনার সাক্ষী থেকেছে এই স্টেশন। রাতে স্টেশনে অস্বাভাবিক
দৃশ্য দেখতে পাওয়া এবং পরক্ষণেই তা মিলিয়ে যাওয়া, এই
অভিজ্ঞতাও নাকি হয়েছে বহু যাত্রীর। এছাড়া শেষ মেট্রো ধরতে গিয়ে অনেকেই চোখের সামনে
ছায়া মূর্তি ভেসে উঠতে দেখেছেন বলেও শোনা যায়। অনেক আগে, যখন গ্রেটার কলকাতার ধারণা
গড়ে ওঠেনি, ট্রেনের
সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার ঘটনার বেশির ভাগই ঘটত এই স্টেশনকে কেন্দ্র করে।
৮) উইপ্রো অফিস: সল্টলেকের
এই অফিসে কর্মচারীরা নাকি প্রায়ই রাতের শিফটে বিভিন্ন ছায়ামূর্তি দেখতে পান। আবার
অনেকে নাকি কানের পাশে চাপা স্বরে অশরীরীর কণ্ঠস্বরও শুনেছেন। ওই অফিসের সব থেকে
ভয়ঙ্কর জায়গা নাকি তিন নম্বর টাওয়ারের তিন তলা। যে কারণে এই জায়গাটিতে যাওয়া-আসা
নিষিদ্ধ, তালাবন্ধ অবস্থায় পড়ে
থাকে বছরের বেশির ভাগ সময়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অফিসবাড়ি তৈরি হওয়ার আগে এখানে একটি কবরস্থান
ছিল। সেই সময়ে নাকি সেখানে একাধিক ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনাও ঘটেছে।
৯) হেস্টিংস হাউস: ইংরেজ
আমলে গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের বসতবাড়ি এখন কলেজ। ছাত্রীদের মধ্যে নাকি
অনেকেই দেখেছেন, ঘোড়ায়
চড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সাদা চামড়ার এক ব্যক্তি। অনেকের ধারণা, ওয়ারেন হেস্টিংসের অতৃপ্ত
আত্মা এটি। আবার অন্য দিকে জানা যায়, এই
হেস্টিংস হাউসের মাঠে ফুটবল খেলতে গিয়ে মারা যান এক কিশোর। অনেকে বলেন, সেই কিশোরের হাসি ও ফুটবল
খেলার আওয়াজও নাকি শোনা যায় রাতের দিকে।
১০) ন্যাশনাল লাইব্রেরি: ১৮৩৬
সালে নির্মিত এই ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে রয়েছে দুর্লভ বইয়ের সংগ্রহ। রাতের অন্ধকারে
নাকি এক মহিলার কান্না শোনা যায় বলে জানিয়েছেন রক্ষীরা। কেউ কেউ বলেন, লর্ড মেটক্যাফের স্ত্রী-র আত্মা এখনও এখানে
ঘুরে বেড়ায়। কোনও বই পড়ার পরে সেটি ঠিক করে তাকে তুলে না রাখলে, ঘাড়ের কাছে ভারী নিশ্বাসের শব্দ শোনা যায়
নাকি। অবশ্য আরও একটি ভৌতিক ঘটনার কথা শোনা যায় এই জাতীয় গ্রন্থাগারকে নিয়ে-
গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস ছিলেন মারিয়ানের দ্বিতীয় স্বামী। হেস্টিংস দম্পতি
বলডান্স করতেন এস্টেটের হলরুমে। নাচের আসরে যোগ দিতেন কলকাতার ব্রিটিশ সমাজের
আমন্ত্রিত অভিজাতরা। আর এই আসর এতই জমে উঠতো যে তিনি নাকি এখনও ভুলতে পারেননি
বেলভিডিয়ার এস্টেটকে। ইংরেজি বর্ষবরণের গভীর রাতে নাকি নির্জন এস্টেটের সামনে এসে
থামে এক জুড়িগাড়ি। পার্টিতে বলডান্সে অংশ নিতে আসেন গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন
হেস্টিংস! সেজন্যই কলকাতার ভূতবিশ্বাসীদের কাছে অন্যতম ‘ভৌতিক’ জায়গা হল ঐতিহাসিক বেলভিডিয়ার এস্টেট বা আজকের
জাতীয় গ্রন্থাগার।
১১) আকাশবাণী ভবন ফাঁকা
লম্বা করিডোর, অজস্র
স্টুডিও আর ব্রিটিশ পরিকাঠামো মিলিয়ে আকাশবাণীতে ভুতের অস্থিত্ব অস্বীকার করা যায়
না।কেউ কেউ এখানে দেখেন হ্যাট,কোর্ট
পরিহিত ইংরেজ সাহেবের ছায়া মূর্তি। যাদের মধ্যে অনেকেই ঘরে প্রবেশ করে আর
অভ্যাসবশত ফাইল পত্র নিয়ে ঘাটাঘাটি করে বলে শোনা যায়। আবার কেউ কেউ দেখেন
মধ্যরাতে রেকর্ডিং রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে কে যেন গান শুনছেন।
১২) লোয়ার সার্কুলার রোডের গোরস্থান:
লোয়ার সার্কুলার রোডের কবরস্থানে শায়িত রয়েছে স্যার উইলিয়াম হে ম্যাকনটন।
প্রথম ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধে তিনি নিহত হয়েছিলেন। তাঁর দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল এই
গোরস্থানে। সার উইলিয়ামের স্ত্রী স্বামীর ছিন্নভিন্ন দেহ আফগানিস্তান থেকে নিয়ে
এসে সমাধিস্থ করেছিলেন কলকাতায়। উইলিয়াম সাহেবের এই সমাধির কাছে গিয়ে কয়েকটি
নির্দিষ্ট কথা বললে কবরের সামনে ছায়াদানকারী গাছটি কাঁপতে থাকে। কথিত আছে, উইলিয়ামের ক্ষুব্ধ আত্মার আস্ফালনেই কাঁপে
গাছটি।
১৩) নিমতলা ঘাট: ১৮২৮-এর
মার্চ মাসে তৈরি হয় শ্মশান এবং তখন থেকেই এখানে শব দাহ করা শুরু হয়। এই শ্মশানে
অনেকেই অশরীরীর উপস্থিতি অনুভব করেছে বলে শোনা যায়। এর পাশাপাশি এও প্রচলিত আছে যে, ভূতনাথ মন্দিরের পাশে পুরনো
শ্মশানে গভীর রাতে আজও কিছু ছায়ামূর্তি দেখা যায়। প্রতি কালীপুজোর রাতে এখানে
আরাধনা করেন কাপালিক এবং অঘোরী সাধুরা।
১৪) কলকাতা বন্দর: নবাব ওয়াজিদ আলি শাহ ইস্ট
ইন্ডিয়া কোম্পানির সময়ে কলকাতা তথা খিদিরপুর বন্দর তৈরী করিয়েছিলেন। তিনি
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে সামুদ্রিক বাণিজ্য সম্পর্ক ভাগ করে নিয়েছিলেন, যা অবিশ্বাস্যভাবে সফল হয়েছিল। তবে
ব্রিটিশরা তাকে প্রতারণা করে এবং তার জন্মভূমি দখল করে। এই
অঞ্চলে কিছু নাবিক এবং ব্যবসায়ীরা দাবি করেন যে,
তারা নবাবের ছায়ামূর্তিকে চারপাশে ঘোরাঘুরি করতে দেখেছেন, যা তারা বিশ্বাস করেন যে নবাবের আত্মাটি
ব্রিটিশদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তাড়া করে বেড়াচ্ছে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন