রবিবার, ২৫ জুন, ২০২৩

এবার কি সত্যি পুতিনকে রাশিয়ার গদি ছাড়তে হবে?

 

রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করল ওয়াগনার বাহিনী। একই সঙ্গে রেডিয়োবার্তায় মস্কো অভিযানের কথাও ঘোষণা করেছে কুখ্যাত এই ভাড়াটে খুনিদের দল। যা আবার পরিচিত পুতিনের নিজস্ব সেনা নামেও।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রাশিয়াতে বর্তমানে মার্শাল ল চালু হয়েছে অর্থাৎ পুরো রাশিয়াতে এখন সামরিক আইন চলবে। কোনরম নাকরিকদের অধিকারের আইন বা বিচার থাকবেনা, সেনাই সেখানে শেষ কথা বলবে। তবে রবিবার সকালে বেলারুশের রাষ্ট্রপতি আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় প্রিগোজিন বেলারুসে প্রত্যাগমন করেছে এবং তারা জানিয়েছে এখনই রুশী সেনার উপর তারা আক্রমণ করছে না। ভারতে এতগুলি যুদ্ধ সংঘটিত হলেও, মার্শাল আইন কিন্তু কখনও ভারতে লাগু করা হয়নি। তবে ভারতীয় সংবিধানে এর প্রাবধান আছে।

ওয়াগনার প্রধান অলিগার্চ ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের দাবি, তাঁর বাহিনীর উপর ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে মস্কোর সামরিক বাহিনী। যে কারণে তাঁর প্রায় দুহাজার সেনার মৃত্যু হয়েছে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের নেতৃত্বেই তাঁর বাহিনীর উপর হামলা চালানো হয়েছিল বলে অভিযোগ প্রিগোজিনের। আর সেই কারণেই নাকি মস্কোর উপর প্রতিশোধ নিতে অঙ্গীকারবদ্ধ ওয়াগনার গোষ্ঠী।

যদিও রাশিয়া গত শুক্রবার ওয়াগনার গোষ্ঠীর সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। রাশিয়ান সরকারের তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, প্রিগোজিনের সব অভিযোগ মিথ্যা এবং অবাস্তব।অন্যদিকে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রিগোজিন নাকি রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর শেষ দেখে ছাড়বেন বলে ঘোষণা করেছেন। তিনি এও হুমকি দিয়েছেন যে ওয়াগনার গ্রুপের পথে যাঁরা বাধা হয়ে দাঁড়াবে, তাঁদের সকলকে তাঁর বাহিনী ধ্বংস করে দেবে। তাছাড়া রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযানের জন্য সাধারণ রুশ নাগরিকদেরও তাঁর বাহিনীর পাশে এসে দাঁড়ানোর আবেদন করেছেন ওয়াগনার প্রধান।

এদিকে ওয়াগনার গোষ্ঠীর সম্ভাব্য হামলা নিয়ে আপাতত মুখে কুলুপ এঁটেছে ক্রেমলিন। যদিও রাশিয়ার সংবাদ সংস্থা টাস জানিয়েছে, শনিবার ভোর থেকেই ব্যস্ততা লক্ষ করা গিয়েছে মস্কো জুড়ে। রাস্তায় সাঁজোয়া গাড়ি নামানো হয়েছে। মস্কোর বিভিন্ন সরকারি ভবনের সামনেও বেড়েছে নিরাপত্তা। তাছাড়া মস্কোয় ঢোকার সমস্ত রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।যদিও প্রিগোজিনের তরফে সশস্ত্র বিদ্রোহ-এর ঘোষণার পর তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে রুশ সরকার।

রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের পর থেকে কিভ দখলের লড়াইয়ে ওয়াগনার গ্রুপের উপর ভরসা রেখেছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। মস্কোর নির্দেশে প্রিগোজিনের ব্যক্তিগত বাহিনী ইউক্রেনের বিভিন্ন জায়গায় হত্যালীলা চালিয়েছিল বলেও অভিযোগ তুলেছিল ইউক্রেন।

তবে গত কয়েক মাসে ক্রেমলিন এবং ওয়াগনার গোষ্ঠীর সমীকরণে অনেক বদল এসেছে। প্রকাশ্যে এসেছে ওয়াগনার বাহিনী এবং মস্কোর সামরিক নেতৃত্বের মতপার্থক্য। যুদ্ধক্ষেত্রে তাঁর বাহিনীর সদস্যদের মৃত্যুর জন্য বার বার রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু এবং সেনাপ্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভকে দায়ী করেছেন প্রিগোজিন।এখন আর সেই দ্বন্দ্ব, তর্ক এবং বাগ্‌বিতণ্ডার জায়গায় সীমাবন্ধ নেই। আরও একধাপ এগিয়ে তা সশস্ত্র বিদ্রোহের রূপ নিয়েছে।

ওয়াগনার গ্রুপ একটি স্বনিয়ন্ত্রিত সামরিক বাহিনী। এই বাহিনীর বিরুদ্ধে সারা বিশ্ব জুড়ে ধর্ষণ, ডাকাতি, খুন এবং যুদ্ধোপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে।দীর্ঘ দিন ধরে ক্রেমলিনের সঙ্গে ওয়াগনার বাহিনীর সম্পর্কের কথা অস্বীকার করে এসেছে রাশিয়া। তবে পশ্চিমি দুনিয়ার দাবি, রাশিয়ার বিভিন্ন গোপন কাজ উদ্ধারের দায়িত্ব দেওয়া ছিল এই বাহিনীর উপর।বার বার এ-ও দাবি করা হয়েছে, ওয়াগনার গ্রুপ পুতিনের ব্যক্তিগত বাহিনী, যারা কেবলমাত্র রাশিয়ার একনায়কের নির্দেশই অক্ষরে অক্ষরে পালন করে থাকে।

প্রিগোজিন ওয়াগনার বাহিনীতে নতুন সদস্য নিয়োগের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি পুতিনের ঘনিষ্ঠ হিসাবেও পরিচিত। মনে করা হয় ক্রেমলিনের বিশেষ বিশেষ কাজ দেখাশোনার কাজেও যুক্ত ছিলেন তিনি। তাঁর কেটারিংয়ের ব্যবসা আছে। সেই কারণে পুতিনের রাঁধুনি বলেও পরিচিত প্রিগোজিন।

মনে করা হয়, এর আগে বিশেষ অভিযান চালানোর জন্য এই বাহিনীকে পূর্ব আফ্রিকায় মোতায়েন করে ক্রেমলিন। যদিও এর দায় বরাবরই এড়িয়ে গিয়েছে রাশিয়া। জল্পনা রয়েছে, সিরিয়ার আন্দোলকারীদের দমন করতেও এই ওয়াগনার বাহিনীকে কাজে লাগিয়েছিলেন পুতিন। এই বাহিনীর অস্তিত্ব নিয়ে বহু জল্পনা থাকলেও ২০১৪ সালে ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলে এই গোষ্ঠীর কার্যকলাপ প্রথম প্রকাশ্যে আসে।

প্রাথমিক ভাবে, রাশিয়ার কয়েকশো অভিজ্ঞ সেনা নিয়ে এই বাহিনী গঠিত হয়েছিল। তবে বর্তমানে এই বাহিনীতে ৫০ হাজারের মতো সেনা রয়েছে।শোনা যায়, ডনবাসের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারা ক্রেমলিনের নির্দেশ মানতে অস্বীকার করলে তাঁদের হত্যা করার জন্য এই বাহিনীকে পাঠানো হয়। অবশ্য এই হত্যাকাণ্ডের দায় এসে চাপে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর উপরই।

ওয়াগনারের প্রতিষ্ঠাতা এবং নেতা দিমিত্রি উডকিন, রাশিয়ার বিশেষ বাহিনী স্পেটসনাজ-এর লেফটেন্যান্ট কর্নেল ছিলেন।শোনা যায়, একসময় ওয়াগনার বাহিনী এতটাই বিপজ্জনক হয়ে ওঠে যে রুশ সরকারও তাঁদের অর্থ দিতে অস্বীকার করে। এর পরে পুতিন অলিগার্চকে এই গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণে নিযুক্ত করেন।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন