সোমবার, ২৬ জুন, ২০২৩

পৃথিবীতে থাকা একমাত্র বিনামূল্যের ভারতীয় রেল পরিষেবা

 

ভারতীয়দের জীবনে নির্ভরযোগ্য পরিবহণ ব্যবস্থা হিসাবে বিশেষ স্থান রয়েছে ট্রেনের। কম খরচে দ্রুত এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার ক্ষেত্রে ট্রেনের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু ভারতে এমনও একটি ট্রেন রয়েছে, যা গত ৭৫ বছর ধরে যাত্রীদের বিনামূল্যে পরিষেবা দিয়ে যাচ্ছে। এই ট্রেনের নাম ভাখড়া ট্রেন। এটি একটি দৈনিক ট্রেন, যা পঞ্জাব এবং হিমাচল প্রদেশের সীমান্তে অবস্থিত নাঙ্গল এবং ভাখড়ার মধ্যে যাতায়াত করে।

১৯৪৮ সালে চালু হওয়া বিশেষ ট্রেনটি প্রাথমিক ভাবে শ্রমিক পরিবহণের জন্য চালু হয়েছিল। ভাখড়া-নাঙ্গল বাঁধে কর্মরত নির্মাণকর্মীদের জন্যই মূলত এই ট্রেন চালু করা হয়েছিল। নির্মাণে ব্যবহৃত ভারী সরঞ্জাম সরবরাহ করার জন্যও ব্যবহার করা হত এই ট্রেন।১৯৬৩ সালে ভাখড়া-নাঙ্গল বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ হয়। তত দিন পর্যন্ত নির্মাণকারী শ্রমিক এবং স্থানীয়েরা নিয়মিত এই ট্রেনে যাতায়াত করতেন।

বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার পর শ্রমিকেরা এই ট্রেনে যাতায়াত বন্ধ করলেও স্থানীয় গ্রামবাসীদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে রয়ে গিয়েছিল এই ট্রেন। ২৫টি গ্রামের পাশ দিয়ে চলা ট্রেনটি প্রতি দিন প্রায় ৩০০ যাত্রীকে নিয়ে যাতায়াত করে। যাত্রীরা মূলত স্কুলপড়ুয়া এবং শ্রমিক।

শতদ্রু নদী এবং শিবালিক পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে চলা এই ট্রেনটি প্রতি দিন মাত্র ১৩ কিলোমিটার পথে যাতায়াত করে। প্রাথমিক ভাবে, ট্রেনটি বাষ্পচালিত ইঞ্জিনের মাধ্যমে চালানো হত। তবে ১৯৫৩ সালে এই যাত্রাপথকে আধুনিক করার উদ্দেশে আমেরিকা থেকে তিনটি নতুন ইঞ্জিন আমদানি করা হয়। তার পর থেকে ৭০ বছর ধরে এই ট্রেনটির ইঞ্জিন বদলানো হয়নি।ভাখড়া ট্রেনের ইঞ্জিনটি প্রতি ঘন্টায় প্রায় ১৮ থেকে ২০ লিটার ডিজেল খায়।

দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে করাচির কাঠ দিয়ে ট্রেনটির কামরা তৈরি করা হয়েছিল। প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং উন্নত ইঞ্জিন সত্ত্বেও ট্রেনের পুরনো কাঠের মডেল আর বদলানো হয়নি। বর্তমানে এই ট্রেনটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে ভাখড়া বিয়াস ম্যানেজমেন্ট বোর্ড (বিবিএমবি)।

ট্রেনটি প্রতি দিন সকাল ৭টা ৫ মিনিটে নাঙ্গল স্টেশন থেকে ছেড়ে যায় এবং ভাখড়া পৌঁছয় সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ। একই দিনে, এটি আবার নাঙ্গল থেকে দুপুর ৩টে ৫ মিনিটে ভাখড়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। ভাখড়া পৌঁছয় বিকাল সাড়ে ৪টে নাগাদ।

খরচ বৃদ্ধির কারণে ২০১১ সালে ট্রেনটির বিনামূল্যে পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়ার কথা ভেবেছিল বিবিএমবি। তবে শেষ পর্যন্ত তা করা হয়নি।ঐতিহাসিক গুরুত্বের কারণেই ট্রেনের নিত্যযাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া না নেওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন কর্তৃপক্ষ। স্থানীয়দের মধ্যে ভাখড়া-নাঙ্গল বাঁধের গুরুত্ব বাঁচিয়ে রাখতেও ভাড়া চাপানো হয়নি বলে জানানো হয়।

বর্তমানে ভারতে প্রতি দিন ২২ হাজারেরও বেশি ট্রেন যাতায়াত করে। ভারতীয় রেল বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম রেলওয়ে। বিনা টিকিটে ট্রেনে যাত্রা করা দণ্ডনীয় অপরাধ। তবে ভাখড়া ট্রেনের যাত্রীদের চিন্তা করতে হয় না ট্রেনের ভাড়া নিয়ে।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন